খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল : প্রতি বছর প্রতি মাসের নির্দিষ্ট কিছু দিনে কিছু দিবস পালিত হয়। ঐ নির্দিষ্ট দিনে অতীতের কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে স্মরণ করা বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতেই এই সব দিবস পালিত হয়। পালনীয় সেই সব দিবসগুলোর মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবস।
আরও পড়ুন : রোহিঙ্গা ক্যাম্প দেখলেন মার্কিন মন্ত্রী
সোমবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল জেলা সম্মিলিত পরিষদ আয়োজন জেলার বিভিন্ন উপজেলার সেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে এই আন্তর্জাতিক সেচ্ছাসেবক দিবস পালিত হয়।
সম্মিলিত স্বেচ্ছাসেবী পরিষদের উদ্যোগে বর্ণাঢ্য একটি র্যালী অনুষ্ঠিত হয়েছে। র্যালীটি শহরের ভিক্টোরিয়া রোড থেকে র্যালীটি বের হয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পূণরায় ভিক্টোরিয়া রোডে এসে শেষ হয়।
এতে টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দায়িত্বশীল ও সদস্যরা এই র্যালীতে অংশগ্রহণ করে । র্যালী শেষে বক্তব্য রাখেন টাঙ্গাইল স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশনের উপদেষ্ঠা বিপ্লব দত্ত পল্টন।
আরও পড়ুন : নরসিংদী কলাবাগানে মিলল দুই মরদেহ
এসময় উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইল জেলা সেবক সংগঠন,টাঙ্গাইল স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, দূ্র্বার সেচ্ছাসেবী সংগঠন,বাংলাদেশ স্বপ্ন পূরণ ফাউন্ডেশন, বাচতে হবে ফাউন্ডেশন, ভূঞাপুর ব্লাড ব্যাংক, নিঃস্বার্থ সংগঠন টাঙ্গাইল, রক্তের বাধন ঘাটাইল, নাগরপুর সেচ্ছাসেবী ফাউন্ডশন, টাঙ্গাইল রক্ত যোদ্ধা, প্রতিভা ছাত্র সংগঠন ভূঞাপুর, দেলদুয়ার সেচ্ছাসেবী সংগঠন, মানবতার ফাউন্ডেশন সিলিমপুর, আশেক পুর সমাজ কল্যান সঙ্গ, সেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশ, শহিদ বাপ্পি স্মৃতি ফাউন্ডেশন, মানবতার সেবায় ভূঞাপুর, ঘুড়ি ফাউন্ডেশন ভূঞাপুর, কালিহাতি ব্লাড ফাউন্ডশন, সন্ধি বন্দন ফাউন্ডেশন, আলকারিমু মানব কল্যান ফাউন্ডেশন, টাঙ্গাইল ব্লাড ফাউন্ডেশন, আল্লাহ দান মানব সেবা ফাউন্ডেশন, হিউম্যানিটি ব্লাড ফাউন্ডেশন মির্জাপুর স্বেচ্ছাসেবী ফাউন্ডেশন, সেচ্ছাসেবী রক্তদান ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,রক্তের বন্ধু ফাউন্ডেশন টাংগাইল, রক্তের বন্ধু ফাউন্ডেশন টাংগাইল, সেবা ফাউন্ডেশন এস এফ মাকড়াই ঘাটাইল, কালিহাতি মানবিক ফাউন্ডেশন, গোপালপুর ব্লাড ডোনার এসোসিয়েশন প্রমূখ।
যে কোনো দুর্যোগে মানবিক সহায়তা প্রদানে স্বেচ্ছাসেবকদের সচেতন ও দক্ষ করে তোলার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৮৫ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৭ তারিখ অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহবান জানানো হয়।
আরও পড়ুন : উলিপুরে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স চালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ
জীবনের সর্বত্র স্বেচ্ছাসেবীদের অবদান সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং ঘরে ও বাইরে স্বেচ্ছাসেবায় অধিক সংখ্যক মানুষের অংশগ্রহণে উৎসাহ প্রদান, আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।
স্বেচ্ছায়-স্বপ্রণোদিত হয়ে আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়ার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এটি সমাজের সব বয়সী মানুষের, সকলস্তরের মানুষেরই নৈতিক দায়িত্ব। বিশেষ করে যুবকদের ওপর এই দায়িত্বটি বেশি। দেশের জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ যুবক। এদেরকে শক্তিতে পরিণত করার মাধ্যমে প্রত্যেককে একেকজন সেবক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি দেশের প্রয়োজনে যুবকরা সংগঠিত হয়ে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলা করতে পারে।
দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবক মনোবৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ করা এখন সারা বিশ্বেই অত্যন্ত গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই লক্ষে গঠিত হয়েছে জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবক কর্মসূচি ইউএনভি। এটি জার্মান ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান।
বিশ্বের একশ’ ৩০টি দেশে তারা সক্রিয় রয়েছে এবং ৮৬টি দেশে তাদের ফিল্ড ইউনিট রয়েছে। ১৯৭০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি ইউএনডিপি এর দপ্তরের সাহায্যে তাদের কার্যক্রম প্রচার করে।
আরও পড়ুন : ফেনীতে প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইলচেয়ার বিতরণ
প্রকৃত অর্থে মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই স্বেচ্ছাসেবক। ব্যক্তি, সমাজ বা রাষ্ট্রের কল্যাণে নিজের শ্রম, অর্থ, সময় ব্যয় করার মনমানসিকতা পোষণ করা উচিত প্রতিটি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরই। আর মানবজাতির মধ্যে এই ধরণের গুণাবলী যাদের আছে তারাই প্রিয় মানুষের কাছে যেমন, সৃষ্টিকর্তার কাছেও তেমনি।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সমাজে প্রকৃত নিঃস্বার্থ স্বেচ্ছাসেবকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। মেকি লোক দেখানো পরোপকারীরা সমাজের উন্নতি নয়, বরং সমাজের শান্তি বিঘ্নিত করছে, অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। আজকের এই আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবক দিবসে আমাদের প্রত্যাশা হচ্ছে, সবার মেধা শ্রম নিয়োজিত হোক শতভাগ মানব কল্যাণে।
সান নিউজ/এইচএন