মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা ইউনিয়নের কাজীর বিরুদ্ধে এবার অভিযোগ দায়ের করেছে বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরী।
আরও পড়ুন : কিশোরীকে ধর্ষণের দায়ে যুবকের কারাদণ্ড
বুধবার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মাদ্রাসা ছাত্রী কিশোরী (১৪) জেলা রেজিস্টার কার্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
একই সাথে অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা ও কাবিননামার স্বাক্ষী কিশোরীর ছোট বোনও।
অভিযোগে উল্লেখ করেন, প্রবাসী একটি ছেলে আমাকে ব্লাকমেইল করিয়া আমার এবং তার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করার ভয় দেখাইয়া প্রবাসীর বাবা তাবু মাদবরের সহয়তায় আমাকে বেতকা ইউনিয়ন কাজী অফিসে নিয়া যায় । এ সময় আমার গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন নিয়া যায় কাজী ও ছেলের বাবা তাবু মাদবর।
আরও পড়ুন : রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘট চলছে
পরে, চেইন বিক্রি করে আমার নামে একটি জন্ম নিবন্ধন এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করিয়া আনে। গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাবু মাদবর আমাকে বেতকা ইউনিয়নের কাজির বাড়িতে নিয়া কাজীসহ অন্যান্যরা লোকজন ভয়ভীতি দেখাইয়া আমার বিবাহ রেজেস্ট্রি করে।
সম্প্রতি অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই স্হানীয় মাদ্রাসার ছাত্রী কিশোরীর (১৪) বছরের বিয়ে পড়ান বেতকা ইউনিয়ন কাজি ইলিয়াস। এ নিয়ে গেলো কয়েকদিন ধরে ইউনিয়নটিতে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। একই গ্রামের তাবু মাদবরের ছেলে প্রবাসী সিয়াম মাদবরের সাথে এই বিয়ে পড়ান তিনি। অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে অবৈধভাবে বিয়ে সম্পন্ন করেন কাজী।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
একের পর এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বাল্যবিবাহ পড়ানোর ঘটনায় আলোচিত কাজী এর আগেও আরও বাল্য বিবাহ পরিয়ে মুচলেকা দিয়েছেন। সম্প্রতি এ ঘটনায় টঙ্গীবাড়ি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে মুচলেকা দেন তিনি।
এর আগেও ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে পড়ানোর সময় বেতকা ইউনিয়ন কাজী অফিস থেকে বড়-কনেসহ তাকে আটক করে পুলিশ। সে সময় এ ধরনের কাজ আর করবেনা বলে মুচলেকা দিয়ে এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রেহাই পায় ।
এদিকে, কিশোরীর কাবিননামা যাচাই করে দেখা যায় কাজী যার সাথে বিয়ে পড়িয়েছেন। ছেলে বিদেশ থাকলেও কাজী ছেলে পক্ষের কোন উকিল নিযুক্ত করেন নাই। নিয়ম অনুযায়ী ছেলে পক্ষে ২ জন স্বাক্ষী দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১১ বছরের কিশোরীকে স্বাক্ষী মনোনিত করে সম্পূর্ণ আইন বহিভূর্তভাবে বিয়েটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : রাজশাহীতে আসামির ফাঁসি কার্যকর
বিষয়টি নিয়ে কিশোরীর পিতা জেলা রেজিস্টার অফিস ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করে। কাজী পরে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে হাজির হয়ে আর বাল্য বিবাহ পড়াবেন না বলে সম্প্রতি মুচলেকা দেন।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা বলেন, আমার মেয়ে ২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করে। আমার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়া সত্বেও বেতকা ইউনয়নের কাজী ইলিয়াস তাকে বিয়ে পড়ান। আমার মেয়ের গলায় একটি স্বর্ণের চেইন ছিলো। যাহা বিক্রি করে কাজী বিক্রির সব অর্থ নিয়ে অবৈধভাবে বিয়ে পড়ান। পরে আমি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ও জেলা রেজিস্টার বরাবর অভিযোগ দায়ের করি।
আরও পড়ুন : রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘট
জেলা রেজিস্টার নোটিশের প্রেক্ষিতে গত ২৭ নভেম্বর বেলা ১১ সময় আমি ও আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক দুই মেয়ে যথা সময়ে হাজির হইলেও কাজী পরে দুপুর ২ টার দিকে জেলা রেজিস্টার কার্যালয়ে হাজির হয়। জেলা রেজিস্ট্রারের সামনে হাজির হয়ে আমি ও আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক ২ মেয়ে কাজীর প্রতারণার বিষয়টি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে মৌখিকভাবে অবহিত করি এবং পূনরায় আবারো লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত বেতকা ইউনিয়ন কাজী ইলিয়াস বলেন, আমি আমার জবাব লিখে জমা রেখেছি। যেখানে প্রয়োজন হয় সেখানে আমার জবাব দিয়ে দিবো।
সান নিউজ/এইচএন