বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর মোহন ইক্ষু খামারের খেঁজুর বাগানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার লিটার খেঁজুরের রস সংগ্রহ করছেন গাছিরা।
রস তৈরী হচ্ছে সুসাদু খেজুরের গুড়। রস ও খেজুর গুড় সংগ্রহ করতে ভীড় করছেন হাজারো দর্শনার্থী।
প্রতিদিন ভোরের সূর্য ফোটার আগেই গাছি গাছে উঠে রস সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। গাছের ফোটা ফোটা রসে একসময় পূর্ণ হয়ে যায় মাটির হাড়ি। সেই রস ভর্তি হাড়ি নামিয়ে চুলোর উপরে বড় টিনের কড়াইয়ে ঢালা হয়। তারপর সেই রসকে আগুনে জ্বালিয়ে ঘন করার পর কড়াই চুলো থেকে নামিয়ে সেটি ঘুটনির সাহায্যে কিছুক্ষণ ঘুটা হয়। ঘুটার পরে সেই ঘন তরল গুড় ছোট ছোট মাটির খাচে ঢালা হয়। কিছুক্ষণ পর সেগুলো জমাট বেঁধে ঢিকা গুড়ে পরিণত হয়। এভাবেই দিনভর চলতে থাকে গাছিদের কর্মযজ্ঞ।
আর প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন কর্মযজ্ঞ দেখতে, খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহ করতে প্রতিদিন দুর দূরান্ত হতে ছুটে আসছেন শতশত দর্শনার্থী।
আনোয়ার হোসেন নামে একজন দর্শনার্থী বলেন, এখানকার গুড় ও রস খুবই সুস্বাদু। তাই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসেন রস ও গুড় কিনতে।
দিনাজপুর থেকে আসা লিটন আহম্মেদ বলেন, আমি ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করি। সেখানকার বস আমাকে খেঁজুরের গুড় নিয়ে যেতে বলেছেন। তাই আমি এখানে গুড় কিনতে এসেছি।
নাটোর জেলার লালপুর থেকে খেঁজুরের রস সংগ্রহ করতে আসা আব্দুল মালেক বলেন, সকাল ১০টা থেকে গাছের ছাল কেঁটে হাড়ি টাঙ্গানোর কাজ দুপুর পর্যন্ত চলে। আর এই হাড়িতে ফোটায় ফোটায় রস জমতে থাকে। পরে সেই হাড়ি গুলো রাত ৩টা থেকে গাছ থেকে নামানো হয়। হাড়ি ভর্তি সেই রস দিয়ে গুড় তৈরি করা হচ্ছে। এখানে দুই প্রকার গুড় তৈরি করা হয়। একটি স্থানীয় ভাষায় ঢিকা গুড় ও লালি গুড় যেটিকে তরল গুড় বলা হয়। প্রতি কেজি গুড় ২৫০ দরে এবং খেঁজুরের রস প্রতি লিটার ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
মোহন খামারের ৭শ খেজুরের গাছ দীর্ঘদিন যাবত কোন কাজে আসছিল না। গতবছর প্রথম বারের মতো রাজশাহী থেকে কয়েকজন গাছি বাগানটি লিজ নেন মাত্র ৪০ হাজার টাকায়।তারা খেজুর গাছ হতে রস সংগ্রহ করে লাভবান হওয়ায় এ বছর বাগানটি ঠাকুরগাঁও সুগার মিল কর্তৃপক্ষ এক বছরের জন্য ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় লিজ দেয়।
বতর্মানে শীত কম হওয়ায় গাছ থেকে রস কম বের হচ্ছে বলে জানান গাছিরা। তারপরও ৭শ শত গাছ থেকে দিনে ১ হাজার লিটার রস সংগ্রহ করা হচ্ছে যার বাজার মূল্য ৮০ হাজার টাকা। শীত বৃদ্ধি পেলে দিনে ৩ হাজার লিটার রস সংগ্রহের আশা করছেন লীজ গ্রহনকারী আল আমীন।
তিনি বলেন, এখানে নির্ভেজাল গুড় তৈরি করা হচ্ছে। তাই এখান থেকে প্রচুর মানুষ রস ও গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। এখানে ভোর রাত থেকে সারা দিনে অনেক মানুষের ভীড় হয়। বর্তমানে দর্শনার্থীর ভীড়ে মুখরিত মোহন খামার এলাকা।এক কথায় খেঁজুর বাগানটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যপারে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান জানান, মোহন খামারের খেজুর বাগানে যেভাবে মানুষের ভীড় বাড়ছে তাদের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তারপরও সাধারণ মানুষ ও বহিরাগত মানুষজন যাতে বিপদে না পড়ে সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে।
সান নিউজ/এনকে