মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মেতে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। দিনরাত মিলিয়ে পদ্মা সেতুর আশপাশে নদীর বুক চিরে শতাধিক ড্রেজারে চলছে এ বালু উত্তোলন। আর সেই বালু নিতে পদ্মার বুকে নেমেছে বাল্কহেডের ঢল। দেশীয় তৈরী ড্রেজার গুলো থেকে বালু লোড করতে সেখানে ছুটে আসছে শতশত বাল্কহেড। আর ওই বালু যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে। বালু উত্তোলন ছাড়াও পদ্মায় বাল্কহেড ঠেকাতে প্রশাসন কিংবা নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ডের কোনো তৎপরতা নেই।
আরও পড়ুন: সুইসদের বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রথম জয়
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়াঘাটের অদুরে পদ্মার বুকে শতাধিক ড্রেজারে অনবরত বালু উত্তোলন করে চলেছে। বালু উত্তোলন করা হচ্ছে পদ্মা সেতুর পিলারের কাছাকাছি স্থান থেকেও। তবে পদ্মা সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রীজের কাজের সুবিধার্থে ১৬ টি ড্রেজারকে বালু কাটার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।
অথচ এ গুলোর বাইরে পদ্মার বুকে এখন বালু উত্তোলনে মহোৎসবে মেতেছে শত ড্রেজার। এ চিত্র দিনের বেলায় অবলোকন করা গেলেও রাতের বেলায় বালু উত্তোলনে ড্রেজারের সংখ্যা আরও বাড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে, চাঁদের আলো ড্রেজিং প্রকল্প, বিক্রমপুর ড্রেজিং প্রকল্প, মদিনার আলো-১, বিসমিল্লাহ-২, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ, আল্লাহ ভরসা, রিভারডিক্স ড্রেজিং প্রকল্প, পদ্মা লোড ড্রেজার-২, আল ফাতেহা ড্রেজিং প্রকল্প, এমভি আল-আরাফ, মেসার্স তোফাজ্জল মোল্লা, এমভি সিয়াম প্রভা, এমভি মোনজিয়াত, মেসার্স মরিফম সালমা-১, দক্ষিন দশআনী, এমভি হাসনাত হাফিজুর-১, এমভি মিশু মোল্লা- প্রভৃতি বাহারী নামের ড্রেজারে বালু উত্তোলনের দৃশ্য সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করা গেছে।
আর পদ্মার বুকে এ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটে কারা রয়েছেন-তা জানার উপায় নেই। ড্রেজার ও বাল্কহেড শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হলে অনুমতি আছে বলে সাফ জানাচ্ছেন। তারা জানেন অনুমোদন নিয়ে বৈধ ভাবেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ড্রেজার শ্রমিক জানান, ৬০ পয়সা ঘন ফুট দরে বাল্কহেড গুলোর কাছে বালু বিক্রি করছেন তারা। আয়তন অনুযায়ী একেকটি বাল্কহেডে ৬ হাজার থেকে ৩০ হাজার ঘন ফুট বালু ধারন ক্ষমতা রয়েছে।
অন্যদিকে, উপজেলা প্রশাসন থেকে পদ্মায় বালু উত্তোলনের কোনো মহল বা উজারা না থাকলেও প্রতিদিন পদ্মার তলদেশের লাখ লাখ ফুট বালু লুটে নেওয়া হচ্ছে। এতে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না।
লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, পদ্মায় কোনো বালু মহালের ইজারা দেওয়া হয়নি। গেলো ৬ মাসের তথ্য যদি দেখা যায় তবে অবৈধ বালু উত্তোলন, অবৈধ ড্রেজার বা অবৈধ বাল্কহেড যা-ই বলুন বিভিন্ন সময়ের অভিযানে ৭৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৫০ টি নৌযান চলাচলের অকোজো করা হয়েছে।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের টেষ্টা পাইল ড্রাইভের যন্ত্রাংশ নদীর তলদেশ থেকে উঠানোর জন্য ১৬ টি ড্রেজারকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেতুর নির্দিষ্ট পিলার তথা ২৭ থেকে ২৮ নং পিলারের ২৫০ মিটারের মধ্যে ওই ড্রেজার গুলো বালু উত্তোলন করবে শুধুমাত্র। তবে বিক্রি করতে পারবে না।
তিনি বলেন, ১৬ টি ড্রেজারের বাইরে যা আছে-তা সব অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। আবার ১৬ টি ড্রেজার বাদ দিয়ে বালু উত্তোলনে অসংখ্য ড্রেজারের মিছিল সেতুর আড়াই’শ মিটার ছাপিয়ে গেছে। এক কথায় বালু উত্তোলনের হিড়িক পদ্মা নদীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টেই পরিলক্ষিত হয়েছে সরেজমিনে ঘুরে।
আবার পদ্মা সেতুর ওই নির্বাহী প্রকৌশলীর কথা অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়া ১৬ টি ড্রেজার বালু বিক্রি করতে না পারবে না বলা হলেও প্রতিদিন ড্রেজার গুলো বালু বিক্রি করছে সেখানে ছুটে আসা বাল্কহেড গুলোর কাছে।
মাওয়া কোষ্টগার্ডের কমান্ডার বুলবুল আহমেদ বলেন, আমরা অভিযানে গেলেই ড্রেজার ও বাল্কহেড গুলো সেতু কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কাগজপত্র দেখাচ্ছে। এতে আমরা কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।
পদ্মা জুড়ে অবাধে বাল্কহেড চলাচলের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, এরআগেও ড্রেজার নিয়ে অভিযান চালিয়েছি। বরাবরই সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে সেগুলো তাদেরই। তিনি আরও বলেন, অবাধে বাল্কহেড চলাচল আর করবে না। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সান নিউজ/এসআই