জেলা প্রতিনিধি, পাবনা : সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ভালবাসা ও চোখের জলে চির বিদায় নিলেন স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দেশ বরেণ্য শিল্পপতি প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সহধর্মিণী স্কয়ার মাতা খ্যাত অনিতা চৌধুরী।
আরও পড়ুন : ঝালকাঠির দুই বিচারক হত্যার ১৭তম বার্ষিকী
সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে পাবনা সদর উপজেলার বৈকন্ঠপুরের এস্ট্রাস খামারবাড়িতে স্বামী স্যামসন এইচ চৌধুরীর সমাধির পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে স্কয়ার পরিবারসহ স্বজনদের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া।
এ সময় তার বড় ছেলে স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যামুয়েল এস চৌধুরী, মেয়ে স্কয়ার গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান রত্না পাত্র, মেজো ছেলে স্কয়ার ফার্র্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী, ছোট ছেলে স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী পিন্টুসহ শুভান্যুধায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনিতা চৌধুরীর কবরে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান পাবনার জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন, পুলিশ সুপার আকবর আলী মুন্সী,এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি একে আজাদ, বিসিআইএর সাবেক সভাপতি আলহাজ মাহবুবুর রহমান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি, পাবনা প্রেস ক্লাব সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানসহ ঢাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ।
এর আগে সকাল ৯ টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার আতাইকুলা চার্চে অনিতা চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে আশা হয়। সেখানে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে তার মরদেহ নিজ বাড়ি আতাইকুলায় এসে পৌছালে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে স্বজনদের মাঝে। পরে আতাইকুলা চার্চে অনুষ্ঠিত হয় মহয়সী এই নারীর অন্তষ্টিক্রিয়া। সেখনে বিশেষ প্রার্থন পরিচালনা করেন চার্চের ফাদার রুবেন সলিল বিশ্বাস। পরিবারের পক্ষ থেকে সেখানে বক্তব্য দেন তাঁর মেজ সন্তান স্কয়ার গ্রুপের পরিচালক তপন চৌধুরী।
আরও পড়ুন : বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়ীতে অনশন
এসময় অনিতা চৌধুরীর দেবর সমর চৌধুরী ও ভাস্তি সুদিপ্তা চৌধুরী, ভাতিজী জামাই স্যামুয়েল আশিষ বিশ্বাস বলেন, অনিতা চৌধুরী ছিলেন একজন মহিয়সী ও কোমলমতী নারী। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলতেন। পাবনার মাটি মানুষকে নিয়ে ভাবতেন। গরিব ও দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। নিজের প্রার্থনায় দেশ ও মানুষের কল্যাণ কামনা করতেন।
বাংলাদেশ ব্যাপ্টিস্ট ফেলোশিপ এর সাধারণ সম্পাদক লিয়র পি সরকার বলেন, স্কয়ার গ্রুপের মাতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন মিসেস অনিতা চৌধুরী। তিনি অসহায় শিশুদের কথা ভাবতেন। তাদের জন্য খাবার পাঠাতেন। তিনি ছিলেন লাখো মানুষের প্রাণশক্তি। সবসময় মানুষের কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে মানবসম্পদ গড়ার বিষয়ে ভাবতেন। ব্যবহারে অত্যন্ত নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী পেয়েছি আমরা । অনিতা চৌধুরীর মৃত্যু শুধু পাবনা নয়, বাংলাদেশের জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি। তার শুন্যতা পূরণ হবার নয়।
স্কয়ার পরিবারের সুত্র জানায়, স্যামসন এইচ চৌধুরীর ব্যবসায়িক সফলতার পেছনের কারিগর ছিলেন অনিতা চৌধুরী। ১৯৩২ সালের ৫ আগষ্ট জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৪৭ সালের ৬ আগষ্ট স্যামসন এইচ চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সন্তানদের লালন পালন করে স্বামীর সকল সুখে দুখে পাশে থেকে পরামর্শ দিতেন অনিতা চৌধুরী। তিনি পাবনার ধর্মবর্ণ সব মানুষের প্রিয়প্রাত্র ছিলেন। তিনি পরোপকারী ও দানশীল ছিলেন।
আরও পড়ুন : শপথ নিলেন মনিরুজ্জামান ফুল মিয়া
স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান স্যামসন এইচ চৌধুরীর সহধর্মিনী স্কয়ারের প্রায় ৬৪ হাজার কর্মিকে নিজ সন্তানের মত আদর ভালবাসা দেওয়ায় তিনি ‘স্কয়ার মাতা’ হিসেবে পরিচিতি পান।
এর আগে গতকাল রোববার (১৩ নভেম্বর) দুপুর ১ টা ৬ মিনিটে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পউদ্যোক্তা স্কয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরীর সহধর্মিনী ‘স্কয়ার মাতা’ মিসেস অনিতা চৌধুরী ৯০ বছর বয়সে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে পরলোকগমন করেন।
২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা স্যামসন এইচ চৌধুরী ৮৬ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরের র্যাফেলস হাসপাতালে মারা যান। চার বন্ধুর হাত ধরে ১৯৫৮ সালে যাত্রা শুরু করে স্কয়ার গ্রুপ। ওষুধের ব্যবসা দিয়ে শুরু করলেও পরে তা স্বাস্থ্যসেবা, ভোগ্যপণ্য, বস্ত্র, মিডিয়া, টিভি ও তথ্যপ্রযুক্তি, নিরাপত্তা সেবা, ব্যাংক ও ইনস্যুরেন্স, হেলিকপ্টার ও কৃষিপণ্যে বিস্তার করে। তাদের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মোট ২০টি।
সান নিউজ/এইচএন