নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: যশোরের মণিরামপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানমকে শ্লীলতাহানি, কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি, গালিগালাজ করার অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। মামলায় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর ভাগ্নে, তার এপিএসসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
সোমবার (২৭ জুলাই) নাজমা খানম নিজেই মামলাটি করেছেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের মণিরামপুর আমলি আদালত ভুক্তভোগীর অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পবরর্তী শুনানির দিন আগামী ২০ অক্টোবর ধার্য্য করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আবদুল লতিফ জানান, মামলায় উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু, ভোজগাতি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জলি আক্তার, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু ও মৃত ইব্রাহিম খানের ছেলে কবীর খানকে আসামি করা হয়েছে।
উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু যশোর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাগ্নে। আর কবির খান প্রতিমন্ত্রীর এপিএস।
এজাহারে নাজমা খানম অভিযোগ করেন, তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে উপজেলা প্রশাসন পরিচালনা করতে থাকেন। এতে দুর্নীতিবাজরা তার ওপর ক্ষুব্ধ হন। করোনাকালে ৫৫৫ বস্তা ত্রাণের চাল চুরির ঘটনায় সারা দেশে আলোড়নের সৃষ্টি হয়। এই চুরিতে জড়িত পাঁচ আসামিকে আটক করে পুলিশ। মন্ত্রীর ভাগ্নে উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু এই চাল চুরির সঙ্গে জড়িত বলে সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেন। পরে আটক পাঁচ আসামিও তার জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত ২২ জুলাই উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সভাপতিত্বে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য ও নাজমা খানম উপদেষ্টা হিসেবে অংশ নেন। সভার শুরুতে নাজমা খানম পৌর এলাকায় চারটি প্রতিষ্ঠানে চুরির বিষয়ে আলোচনা করলে প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় প্রতিমন্ত্রীসহ সকলেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কিন্তু হঠাৎ এজেন্ডা বর্হিভূত বিষয়ে এক নম্বর আসামি ইউপি চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানমের ছেলে তার ফেসবুকে জনপ্রতিনিধিদের কটাক্ষ করে স্ট্যাটাস দেন কলে দাবি করেন। বিষয়টি এজেন্ডা বর্হিভূত হলেও নাজমা খানম যুক্তিসঙ্গত জবাব দেন। এরপর আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে হট্টগোল, হই চই করে জামার হাতা গুটিয়ে বাদিনীকে গালিগালাজ ও মারপিট করতে এগিয়ে যান।
তাদের এই অপতৎপরতা বুঝতে পেরে উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম দ্রুত মিলনায়তন ত্যাগ করেন। কিন্তু পাশে থাকা জিপ গাড়িতে ওঠার সময় তিনি লক্ষ্য করেন আসামিরা তার দিকে এগিয়ে এসে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছেন। তারা কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গিমা, এমনকি উপজেলা চেয়ারম্যানের পরনের শাড়ি টানাটানি করে শ্লীলতাহানি ঘটান। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে উপস্থিত লোকজনের সামনে একজন নারী জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভীষণভাবে অপমানিত ও লজ্জা পান। টানাহেঁচড়ার এক পর্যায়ে তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে মূল্যবান কাগজপত্র ও একটি শাওমি মোবাইল ফোন পড়ে যায়। যা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জলি আক্তার নিয়ে যান।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকায় দুর্নীতিবাজ আসামিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানকে এভাবে হেনেস্তা করেছেন বলেও মামলায় অভিযোগ করা হয়।
সান নিউজ/ এআর