মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ: একের পর এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বাল্য বিবাহ পড়ানোর ঘটনায় আলোচিত টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বেতকা ইউনিয়ন কাজি ইলিয়াস আবারো বাল্য বিবাহ পড়াবেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: চিন্তিত নই, গ্যাস দিতে চেয়েছে চীন
মঙ্গলবার ( ৮ অক্টোবর) তিনি টঙ্গীবাড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে এ মুচলেকা দেন। এর আগেও ২০১৯ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে পড়ানোর সময় বেতকা ইউনিয়ন কাজি অফিস থেকে বড় কনেসহ তাকে আটক করে পুলিশ। সে সময় সে এ ধরনের কাজ আর করবেনা বরে মুচলেকা দিয়ে এবং ১০ হাজার টাকা জড়িমানা দিয়ে রেহাই পায়। নির্ভরযোগ একাধিক সুত্রে থেকে জানা যায় এর পর হতেও সে একাধিক অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ে রেজেস্ট্রি করেছেন।
আরও পড়ুন: ঢাকায় আসছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী
সম্প্রতি অভিভাবকদের অনুমতি ছাড়াই ১৪ বছরের কিশোরীকে বিয়ে পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে এই কাজির বিরুদ্ধে। অভিভাবকের উপস্থিতি ছাড়াই বেতকা ইউনিয়নের স্থাণীয় মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী (ওই কিশোরীকে) গেলো ১৩ই সেপ্টেম্বর তারিখে বিয়ে পড়ান এই কাজী। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ইউনিয়নটিতে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। একই গ্রামের তাবু মাদবরের ছেলে প্রবাসী সিয়াম মাদবর এর সাথে এই বিয়ে পড়ান তিনি।
অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে অবৈধভাবে এই বিয়ে সম্পন্ন করেন কাজী। এ নিয়ে ওই কিশোরীর পিতা মুন্সীগঞ্জ জেলা রেজিস্টার অফিস ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে পৃথক অভিযোগ দায়ের করলে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সে টঙ্গীবাড়ি মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে হাজির হয়ে আর বাল্য বিবাহ পড়াবেনা বলে ফের মুচলেকা দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ডিভোর্সের পথে শোয়েব ও মির্জা!
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী কিশোরীর পিতা বলেন, আমার মেয়ে ২০০৮ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী জন্মগ্রহণ করে। আমার মেয়ের বিয়ের বয়স না হওয়া সত্বেও বেতকা ইউনয়নের কাজি ইলিয়াস তাকে বিয়ে পড়ান। আমার মেয়ের গলায় একটি স্বর্ণের চেইন ছিলো যাহা বিক্রি করে ওই কাজি বিক্রির সব অর্থ নিয়ে কাজী অবৈধভাবে এই বিয়ে পড়ান।
অপরদিকে, কাবিননামা যাচাই করে দেখা যায় ওই ছেলে বিদেশ থাকলেও কাজি ছেলে পক্ষের কোন উকিল নিযুক্ত করেন নাই। নিয়ম অনুযায়ী ছেলে পক্ষে ২ জন স্বাক্ষী দেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১১ বছরের এক কিশোরীকে স্বাক্ষী মনোনিত করে সম্পূর্ণ আইন বহিভূর্তভাবে বিয়েটি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলায় ৯ জনের যাবজ্জীবন
মুন্সীগঞ্জ কাজি সমিতির সভাপতি বিল্লাল হোসেন বলেন, বিদেশে ছেলে থাকলে দুই পক্ষের ২ জন উকিল এবং ২ উকিলের পক্ষে ৪ জন স্বাক্ষী নিয়োগ করে টেলিফোনে বিয়ে পড়ানো যায়। কিন্তু এই কাবিনটিতে মাত্র একজন উকিল নিযুক্ত করে বিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে যা আইন অনুযায়ী বৈধ নয়। আমি কাজী সাহেবকে বিষয়টি বলছি।
মুন্সীগঞ্জ কাজি সমিতির আইন বিষয়ক সম্পাদক কাজী আহাদ বলেন, ছেলে বিদেশে থাকলে অবশ্যই ওই ছেলেকে সনাক্ত করার জন্য ছেলের কাছের রক্তের সম্পর্ক আছে এমন কাউকে ছেলে পক্ষে উকিল নিযুক্ত করতে হবে এবং কাবিননামায় ওই উকিলের স্বাক্ষর নিতে হবে।
আরও পড়ুন: ঝুঁকিতে মার্কিন গণতন্ত্র
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কাজি ইলিয়াস বলেন, ওই মেয়ের বিয়ের সময় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আশায় আমি বিয়ে পড়াইছি। তবে মেয়ে পক্ষের লোকজন কম থাকায় সে সময় সকল সাক্ষী নিতে পারি নাই। পরে এসে সাক্ষী দিয়ে যাবে বলেছে। ছোট অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরীকে বিয়ে পড়ানোটা তার ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসলে সকল কাজিরাই পড়ায়।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শামীম আরা বলেন, কাজি ইলিয়াস সকালে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার অফিসে এসে মুচলেকা দিয়ে গেছেন। তিনি আর কখনো এ ধরনের কাজ করবেন না।
আরও পড়ুন: হত্যা মামলায় ৮ আসামির যাবজ্জীবন
জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে প্রধান সহকারী মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে কিশোরীর পিতার করা একটি অভিযোগের পেয়েছি। তার প্রেক্ষিতে আমরা দুই পক্ষকে নোটিশ করেছি। পরে ব্যবস্হা নেয়া হবে।
সান নিউজ/কেএমএল