এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ: অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এবছর ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পানের আবাদ ভালো হয়েছে। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে কৃষকদের প্রধান অর্থকারী ফসল পানচাষ। এ উপজেলার কৃষকদের বৃহৎ একটি অংশ পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই পানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ থেকেই হামলা
বারো মাসই কম-বেশি উৎপাদিত হয় এ ফসল। পান বছরের সবসময় পাওয়া যায়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে পানের বরজ। পান অর্থকরী ফসল হিসেবে এ এলাকার মানুষের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।
পান ক্রেতা মোঃ শামছুল হক বলেন, পান-সুপারির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। দিন দিন পানের দাম বাড়ায় অনেকে এরই মধ্যে কমিয়ে দিয়েছেন পান খাওয়া। অপরদিকে এবার পানের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। চলতি মৌসুমে যেসব চাষিদের পানের ভালো ফলন হয়েছে তারা এখন বেজায় খুশিতে।
আরও পড়ুন: কিশোরী প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ
ঈশ্বরগঞ্জের বেশ কয়েকজন পান চাষি জানান, চলতি মৌসুমে পানের ফলনও ভালো হয়েছে এবং দামও ভালো পাচ্ছি। এ বছর পান চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।
খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বড়হিত, জাটিয়া, সোহাগি, মাইজবাগ আঠারবাড়ী, উচাখিলা, ঈশ্বরগঞ্জ সদর ও রাজিবপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় পান চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
উপজেলার নওশতি বাজারের পাইকারি পান ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, আমি পাইকারি পান কিনে বিক্রি করি। বর্তমান বাজার দরে এক কুড়ি অর্থাৎ (১হাজার ৬শ) পিস পান প্রকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এক মাস আগেও প্রতি কুড়ি পান বিক্রি হয়েছিল ১০০০-১৫০০ টাকায় ।
আরও পড়ুন: গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো
তিনি আরও জানান, এক কুড়ি পান পাইকারী দরে কিনে খুচরা বিক্রি করলে কুড়ি প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা লাভ হয়।
উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের সূর্যের বাজার এলাকার পান চাষি মোঃ আবু সাইদ (২৮) বলেন, এবার পানের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। এতে আমরা খুব খুশি।
জাটিয়া ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম (৪৮) জানান, তিন কাটা জমিতে পান চাষ করেছেন তিনি। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তাকে দেখে অনেক কৃষক পান চাষে আগ্রহী হয়েছেন। ফলে আগামীতে এ অঞ্চলে পান চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে। এতে কৃষকরা স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
আরও পড়ুন: বিএনপির সমাবেশ থেকেই হামলা
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে খুচরা পান বিক্রেতা নির্মল জানান, ভালোমানের বড় আকারের এক জোড়া বা বিরা পান (৮০টি) বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০-১০০ টাকা, মাঝারি মানের প্রতি জোড়া পান বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়, যা আগে ছিল ৬০-৮০ টাকা ও ছোট আকারের পানের প্রতি জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকায়, যা আগে ছিল ২৫-৪০ টাকা করে।
ঈশ্বরগঞ্জ পৌর বাজারে সপ্তাহে দুই দিন সোম ও শুক্রবার লাখ লাখ টাকার পান বেচাকেনা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে এসব পান চালান হয়। পানের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেচা-কেনা করতে কয়েক শতাধিক চাষি পান নিয়ে বাজারে বসেন। আর স্থানীয় পাইকার ও ঢাকা, খুলনা, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে পান কিনছেন। এসব পান করে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যান বিক্রির জন্য।
আরও পড়ুন: সকলকে মিতব্যয়ী হতে হবে
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, এই বছর উপজেলায় ১০৮ হেক্টর জমিতে পানের চাষ হচ্ছে। উপজেলায় ১২৩৯টির মতো পানের বরজ রয়েছে। এসব বরজে লাল ডিংগী ও ভেরা জাতের পান আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার পান চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে কৃষি অফিস।
এছাড়া মাঠপর্যায়ে পান চাষে যাতে দানাদার কীটনাশক ব্যবহার না করা হয় এবং এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে কৃষকদের সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন উপসহকারী কৃষি অফিসারগণ। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কৃষকসহ সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সান নিউজ/কেএমএল