বনিক কুমার, গোপালগঞ্জ থেকে:
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের কর্মকারপাড়ায় এবার তেমন কোনো কাজ নেই। অথচ বিগত বছরগুলোতে এ সময় দম ফেলার সময় পেতোনা তারা। কোরবানির পশু জবাইসহ মাংস বানানোর কাজে ব্যবহৃত নানা ধরনের ছুরি, কোপা ও চাপাতি বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকতেন এ পাড়ার কর্মকার শিল্পীরা। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে কিছু শিল্পী ছিটে-ফোঁটা কিছু কাজ পেলেও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অধিকাংশরা।
কোরবানির আর মাত্র ছয়দিন বাকি। প্রতি বছর এই সময়টায় কর্মকারদের হাতে থাকতো প্রচুর কাজ। সারা বছর এই সময়টার জন্য তারা অপেক্ষায় থাকেন। কোরবানি উপলক্ষে যে কাজ হতো, তা দিয়ে চলতো বেশ কয়েক মাসের খরচ। দিন-রাত কাজ করে ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী পশু কোরবানির ছুরি, চাকু, কোপাসহ অন্যান্য মালামালের যোগান দিতেন। কেউ কেউ আসতেন পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত ও ধার দিতে। কিন্তু, এ বছর এখনো পর্যন্ত কাজের কোনো চাপ পড়েনি গোপালগঞ্জের কর্মকারদের। করোনার কারণে একদিকে যেমন গরুর হাট এখনো তেমন জমে ওঠেনি, তেমনি কর্মকারদের কাজও তেমন একটা না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই কর্মকারেরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
সরেজমিন সোমবার (২৭ জুলাই) গোপালগঞ্জ জেলা সদরের মার্কাস এলাকায় কর্মকারপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে দোকান রয়েছে ১৫টি। অনেকে বসে বসে গল্প করছেন। কেউ বা টুক টাক কাজ করছেন। তেমন কোনো ক্রেতা নেই।
হতাশার সুরে কর্মকার কানাই বিশ্বাস বলেন, ‘করোনা আমাদের আয়ের পথ বন্ধ করেছে। লোকজন আসছেন না। তাই এখনো আমাদের কাছে কাজ আসেনি। দুশ্চিন্তায় রয়েছি কাজ হবে কি হবে না। তবে শেষ মুহূর্তের আশায় আছি। হয়তো শেষের দুই একদিন আগে কিছু ক্রেতা আসবেন। তাই অল্প অল্প করে কিছু মালামাল তৈরি করে রাখছি।’
কর্মকার অজিত বৈদ্য বলেন, ‘এ বছর আয়-রোজগার নেই। আগামী দিনগুলো কিভাবে চালাবো এই আশঙ্কায় দিন কাটছে আমাদের।’
দিলীপ কর্মকার জানান, এ বছর লোহা, কয়লা ইত্যাদির দাম আগের চেয়ে বেশি হওয়ায় তাদের উৎপাদিত মালামালের দামও একটু বেশি হবে। তারা কেজিপ্রতি পশু জবাই করা ছুরি ৫০০ টাকা, দা ৬০০ টাকা, কোপা ৪০০ টাকা, কুড়াল ৪০০ টাকা ও বটি ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘কোরবানিতে পশু কোরবানি যদি কমে যায়, তাহলে আমাদের কেউ খুঁজবে না। ধার দেনা হয়ে যেসব অস্ত্রপাতি তৈরি করেছি তা রয়ে যাবে। ফলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’
সান নিউজ/ এআর