মো. ফরহাদ হোসাইন, নীলফামারী প্রতিনিধি: মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর এবার মেয়ের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার মারুফা আকতার।
আরও পড়ুন: ১০০ সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
মারুফা আকতারকে অল্প বয়সেই বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। এ কারণে বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশোনা। সবার মতো তারও শুরু হয় সংসার জীবনের ব্যস্ততা। তবে বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এবার মেয়ের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন চার সন্তানের জননী মারুফা।
রোববার (৬ নভেম্বর) শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিমলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট কেন্দ্রে মা মারুফা ও মেয়ে শাহী সিদ্দিকা ডিমলা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে এইচএসসি পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেছেন।
আরও পড়ুন: মৃত্যুর শীর্ষে জাপান
মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবং মারুফা আকতার একই কলেজের বিএম শাখা থেকে পরীক্ষায় বসেছেন। মা ও মেয়ে দুজন ডিমলা উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সরকারি মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় একসঙ্গে অংশ নিয়ে মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন মারুফা আকতার। তিনি এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৬০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন এবং তাঁর শাহী সিদ্দিকা পেয়েছিলেন জিপিএ ৩। ২০০৪ সালে এসএসসি দেওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পরীক্ষার আগেই অভিভাবকেরা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন।
আরও পড়ুন: বাসচাপায় নারীসহ নিহত ২
পরিবার সূত্রে জানা যায়, “মারুফা আক্তারের বাবার বাড়ি নীলফামারী ডিমলা উপজেলার নাউতারা গ্রামে। বিয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যারঝার গ্রামের সাইদুল ইসলামের সঙ্গে। সাইদুল ইসলাম পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণিতে, তৃতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।”
২০০৩ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় মারুফা আক্তারের। এরপর থেমে যায় তাঁর লেখাপড়া। পরপর চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে কেটে যায় ১৫ বছর। তবে লেখাপড়ার প্রতি প্রবল ইচ্ছে তাঁর রয়েই যায়। সেটির ই প্রতিফলন হিসেবে নিজের সুপ্ত ইচ্ছেশক্তির জোরে নিজের মেয়ের সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন মাধ্যমিক। এবার বসেছেন উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষায়।
আরও পড়ুন: কিশোরী প্রেমিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ
নতুন করে পড়াশোনা শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা আক্তার জানান, নিজের ইচ্ছা ও স্বামী–সন্তানদের অনুপ্রেরণায় নবম শ্রেণি থেকে আবার পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ভর্তি হন ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায়। সেসময় তার মেয়েও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন তিনি।
মারুফা আকতার বলেন, “সমাজের আর দশটা মানুষের মতো আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে নিজের পরিচয় দিতে পারি সে জন্য কষ্ট করে পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি। ইচ্ছে আছে এইচএসসি পাস করে দেশের ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।”
আরও পড়ুন: প্লেন বিধ্বস্তে নিহত বেড়ে ১৯
এ বিষয়ে মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, ”আমি আমার স্ত্রীর ইচ্ছেটার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে পারে, আমি চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করব।”
সান নিউজ/এমআর