ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : জীবন দিয়ে হলেও মাঠ রক্ষা করবো- এমন কথা বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের চোঙ্গাখাতা গ্রামের ষাটোর্ধ বৃদ্ধা এক নারী।
আরও পড়ুন : বিয়ে বাড়িতে ইটের আঘাতে বৃদ্ধা নিহত
মাঠ আছে, মাঠ থাকবে। সম্প্রতি গড়েয়ায় খেলার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। দু'পক্ষই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ তুলেন।
জমির বায়না সূত্রে মালিক বলছে এটা কোন মাঠ নয়, রেকর্ডিয় মালিকানা জমি। স্থানীয়রা বলছেন, দেড়শত বছরের অধিক সময় ধরে যুব সমাজ মাঠটিতে খেলা করে আসছে। স্থানীয় প্রশাসন বলছে যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিহত করা হবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা শহর হতে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দুরে সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী নয়া গড়েয়া হাট। হাটের পাশেই দুই একর এলাকা জুড়ে খেলার মাঠ। দেড়শ বছরের অধিক সময় ধরে স্থানীয় শিমু কিশোররা নিয়মিত খেলা-ধুলা করে আসছে মাঠটিতে।
আরও পড়ুন : ভালুকায় শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
হঠাৎ করে মাঠের জমি বিক্রির কথা শুনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। মাঠ রক্ষায় নানা কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি মাঠকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের আহত হন বেশ কয়েকজন। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা দেখা দিয়েছে।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অফিসার ইনচার্জসহ প্রশাসনের অনেকেই ইতোমধ্যে এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
আরও পড়ুন : ধর্ষণ মামলা করায় খুন, গ্রেফতার ১
সুফিয়া বেগম নামে একজন বৃদ্ধা বলেন, দু’শ আড়াই’শ বছর ধরে এই মাঠ চলে আসছে। আমার বাপ, দাদো, চৌদ্দ গুষ্টি পর্যন্ত এই মাঠে খেলা করেছে। আমাদের ছেলে সন্তানেরা এখন খেলছে। মাঠ রক্ষায় যদি জীবন দিতে হয় তাতেও প্রস্তুত আছি। মাঠ আছে, মাঠ থাকবে।
দীর্ঘদিন ধরে মাঠে রেফারীর দায়িত্ব পালন করে আসা রঞ্জন কুন্ড বলেন, আজকে হঠাৎ করে কিছু ভূমি দস্যূচক্র লাঠি সোটা নিয়ে মাঠ দখল করতে আসে। আমাকে মাঠ থেকে বের করে দেয়। পরে এলাকার মানুষ এসে মাঠ দখলে বাধা দেয় এবং তাদের তাড়িয়ে দেয়।
আরও পড়ুন : আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যা
সাবেক ইউপি সদস্য আমির হোসেন আমিন বলেন,আমার বাবা, বাবার বাবারা এই মাঠে খেলেছেন। আমরা খেলেছি, এখন আমাদের সন্তানেরা খেলছে। আমাদের দাবী এই মাঠের জন্য আইনগত: লড়াই করতে হলে তাই করবো। জীবন দিয়ে হলেও মাঠের অস্তিত্ব রক্ষা করব।
বায়নামা সূত্রে জমির মালিক স্বজল কুমার চৌধুরী বলেন, কাগজপত্র যাচাই করে জমি ক্রয় করেছি। কিন্তু পূর্ব শত্রুতার জেরে কতিপয় ব্যক্তির নেতৃত্বে আমার উপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারী আঘাত করে। স্থানীয় জনগণ না থাকলে আজকে কথা বলার সুযোগ পেতাম না।
বায়নামা সূত্রে আরেক জমির মালিক ফখরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, জমির কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই শেষে উকিলের পরামর্শে খাজনা-খারিজ দেখে সঠিক নিয়মে জমির বায়নামা করা হয়। সেই জমিতে সাইনবোর্ড দিতে গেলে স্থানীয়রা হামলা চালায়।
আরও পড়ুন : মাদারীপুরে ঝুঁকিতে বহুতল দুটি ভবন, সরে যাবার নির্দেশ
ওয়ারিশ সূত্রে জমির প্রকৃত মালিক নাজমুল হুদা শাহ এ্যাপোলো বলেন,গড়েয়া মাঠটিকে কেন্দ্র করে যে উত্তেজনা তা জন্মের পর থেকে দেখে আসছি। কে বা কারা ঠাকুরগাঁও থেকে মাস্তান বাহিনী নিয়ে গিয়ে মাঠ দখলের চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তা প্রতিহত করে।
জমির আরেক মালিক নুরুল হুদা বলেন,আমরা এই জমির প্রকৃত মালিক। আমাদের বৈধ কাজপত্র রয়েছে। তাই আমরা হস্তান্তর করেছি।
সোহেল শাহ নামে জমির আরেক মালিক বলেন,আমরা জমির মালিক। কিন্তু আমরা জানতেও পারলাম না, কে জমি ক্রয় করলো আর কে বিক্রয় করলো। ঠাকুরগাঁও শহর থেকে মাস্তানবাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে মাঠ দখল করতে আসলে স্থানীয়রা তা প্রতিহত করে। এ ব্যাপারে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে।
আরও পড়ুন : পাবনায় ছাত্রদল নেতাসহ নিহত ২
স্থানীয় বেলাল হোসেন বলেন,এই চক্রটি ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় ভেজালিয়া জমি ক্রয় করে। আর মাস্তান বাহিনী দিয়ে দখল করে। এর সাথে জড়িত আছেন একজন স্কুল শিক্ষক। তিনি স্কুল ফাঁকি দিয়ে এই সবকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
গড়েয়া ইউপি চেয়ারম্যান রইস উদ্দীন সাজু বলেন,কাগজ যার জমি তার, জমির প্রকৃত মালিক বিক্রি করতেই পারে। বিষয়টি নলেজে আছে। উচ্ছিশৃংখলা না করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধান করাটাই ভালো।
আরও পড়ুন : বাবার ওপর অভিমান করে মেয়ের আত্মহত্যা
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন,গড়েয়া হাটের পাশে খেলার মাঠ নিয়ে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে সেখানে যাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে সে ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জকে (ওসি)কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলা হয়েছে। কোন ব্যক্তি যেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে ব্যাপারে তৎপর রয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন