নিনা আফরিন,পটুয়াখালী: চট্রগ্রামের মিরসরাই‘এ ড্রেজার ডুবে নিখোঁজ ৮ শ্রমিকের বাড়ি পটুয়াখালীর জৈনকাঠী এলাকায় চলছে শোকের মাতম। চার ভাইসহ একই গ্রামের ৮ জনের নিখোঁজের হওয়ায় পুরো গ্রাম জুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। আত্মীয়-স্বজন হারানো কান্না আর আহাজারিতে ভারি হয়েগেছে এলাকার বাতাস। চারদিকে শুধু শোকর্ত মানুষের ভিড়। তারা আট জনই সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২ এর শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
আরও পড়ুন: জামায়াতে ইসলামীর নতুন দল গঠন
নিখোঁজ শ্রমিকরা হলেন, শাহিন মোল্লা (৩৮) তার ছোট ভাই ইমাম মোল্লা (৩২), তাদের চাচাতো ভাই মাহমুদ মোল্লা (৩২) ও তারেক মোল্লা (২২) এবং প্রতিবেশী আল-আমিন (২৫), বাসার হাওলাদার (৩৫), জাহিদ ফকির (২৮) ও আলম সরদার (৩২)। তাদের সবার বাড়ি পটুয়াখালী সদর উপজেলার জৈনকাঠী ইউনিয়নের চর জৈনকাঠী গ্রামে।
এদের মধ্যে আরও তিন শ্রমিকসহ চারজনের লাশ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান। উদ্ধার হওয়া লাশগুলো হলো, পটুয়াখালী সদর উপজেলার চর জৈনকাঠি গ্রামের আনিছ মোল্লার ছেলে ইমাম মোল্লা, আব্দুল হক মোল্লার ছেলে মাহমুদ মোল্লা, সেকান্দার বারির ছেলে জাহিদ বারি। এর আগে মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার হওয়া লাশটি ছিলো একই এলাকার ফকির বাড়ির ফকির রহমানের ছেলে আল আমিন ফকির (২৯)।
আরও পড়ুন: গুরুতর ভুল করবে রাশিয়া
সাংবাদিকদের দেখে শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মা হাসিনা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার সাথে শাহিনের ছোট্ট তিন সন্তান ও তার গর্ভবতী স্ত্রী খাদিজা বেগমের কান্নায় আকাশ ভারি হয়ে ওঠে আকাশ ও বাতাস ।
হাসিনা বেগম জানান, আমার ছেলেরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ওই ট্রেজারের শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন ।কোরবানির আগে বাড়িতে এসেছিল তারা। কোরবানির দুইদিন পরে বড় ছেলে শাহিন বাড়ি থেকে কাজে উদ্দেশ্যে মীরসরাইয়ে চলে যায়। বাড়ির কাজকর্ম সম্পন্ন করে একমাস পরে ছোট ছেলে ইমাম ওই ড্রেজারে কাজে যায়। আজ সকালে আমার দুই ছেলে নিখোঁজের হওয়ার খবর পেয়েছি ।
আরও পড়ুন: দুই বাসের সংঘর্ষে হতাহত ১৬
তিনি আরও বলেন, ছোট ছেলে বিবাহ করেছেন কোরবানি পরে। তবে তার বউ বাবার বাড়ি থেকে তুলে আমাদের বাড়িতে আনা হয়নি।
একই বাড়ির মাহমুদ মা মনোয়ারা বেগম ও তারেকের মা সাহিদা বেগমও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মনোয়ারা বেগম জানান, তার পাঁচসন্তানের মধ্যে মাহমুদ অবিবাহিত এবং ওই ড্রেজারে কাজ করতে। আর মাহমুদ ও তারেক চাচাতো ভাই। তারা তাদের সন্তানদের মরদেহ বাড়িতে এনে দাফনের দাবি জানান সরকারের কাছে।
আরও পড়ুন: ট্রাকে বাসের ধাক্কা, হতাহত ১০
মোঃ তারেক মোল্লার বাবা আব্দুর রহমান বলেন, বন্যা শুরুর আগে তীরে যাইতে চাইছিল তারা। কিন্তু চাকরির হারানোর ভয়ে কিনারায় যেতে পারেনি। পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বাবা আব্দুর রহমান।
অপরদিকে, আল-আমিন হাওলাদার, বাসার হাওলাদার, জাহিদ ফকির ও আলম সরদারদের বাড়িতেও চলছে শোকের মাতম।
আরও পড়ুন: দুই বাসের সংঘর্ষে হতাহত ১৬
শাহিন মোল্লা ও ইমাম মোল্লার মেঝ ভাই মোঃ এনায়েত মোল্লা মঙ্গলবার রাতে মোবাইলে জানান, সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শাহিন ও ইমামেরর সাথে আমার সর্বশেষ কথা হয়েছে। ঝড়ের মধ্যে তারা তখন ভালোই আছে ছিলো। ওদের বন্ধু পার্শ্ববর্তী ড্রেজারের শ্রমিক জহিরুল ইসলাম। সে রাত ৯টার দিকে ওদের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানায়। পরে মঙ্গলবার সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছি। রাত ৯ টার দিকে আল-আমিনে লাশ উদ্ধার করলেও অন্যরা নিখোঁজ রয়েছে।
দূর্ঘটনাস্থলে উপস্থিত মীরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কবির হোসেন জানান, একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। অন্য নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।
আরও পড়ুন: গাছ কেটে সাবাড়, ফার্নিচার বানিয়ে হরিলুট
জৈনকাঠী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মোহাম্মাদ সৈয়দ মহসিন জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। তাদের মরদেহগুলো উদ্ধার করে বাড়িতে আনার জন্য উদ্যোগ নেয়া উচিত।
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ১৬ নং সাহেরখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ৩নং বসুন্ধরা এলাকার বেড়িবাঁধ থেকে ৫০০ ফুট দূরত্বে সাগরের মাঝে রাখা ছিল সৈকত এন্টারপ্রাইজ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বালু উত্তোলনের ড্রেজার মেশিন সৈকত-২। ওই ড্রেজারে শ্রমিক হিসাবে কর্মরত ছিলেন তারা সবাই। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে সাগরে থাকা ড্রেজারটি ডুবে নিখোঁজ হয় তারা সবাই। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আল-আমিন নামের এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। অন্য ৭ জন এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছে।
সান নিউজ/কেএমএল