সান নিউজ ডেস্ক: নাটোরের নলডাঙ্গায় সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ। রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে উপজেলা অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে নলডাঙ্গা বাজারে চেয়ারম্যানের ভাড়া বাসার সামনে হামলার শিকার হন তিনি। এ সময় হামলাকারীরা পৌরসভার সামনে রক্ষিত একটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করে।
আরও পড়ুন: ডেঙ্গু জ্বরে সর্বোচ্চ হাসপাতালে ভর্তি
জানা গেছে, ইটপাটকেলের আঘাতে আসাদ চোখের উপরে আঘাতপ্রাপ্ত হন এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হন। প্রথমে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে তার নিজ বাসভবনে নিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আসাদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রোববার দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ তার অফিস থেকে বের হওয়ার সময় কতিপয় সন্ত্রাসী তাকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছুড়লে তিনি সামান্য আহত হন। এরপরে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে অসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, গত ৪ অক্টোবর আমি হাইকোর্টে আত্মসমর্পণ করে ছয় সপ্তাহের জামিন নিয়ে নাটোরে আসি। এরপর ১২ অক্টোবর সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা তৌহিদুর রহমান লিটন ফেসবুক লাইভে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। জামিনে আসার পরে পরশুদিন থেকে উপজেলা পরিষদে অফিস করছি। শনিবার লিটন ফের আমাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়।
আরও পড়ুন: কর্মবিরতিতে রামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা
তিনি আরও বলেন, হুমকির বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং নলডাঙ্গা থানার ওসিকে জানাই। রোববার দুপরের দিকে আমি পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উপজেলা পরিষদে যাই। এর আগে লিটনের নেতৃত্বে একটি মিছিল করা হয়। ওই মিছিল থেকেও আমাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এরপর দুপুর ১টার দিকে আমার ভাড়া করা বাসার সামনে পৌঁছলে লিটন, ফুটু মাস্টার, সেলিম মাস্টার, রইচ উদ্দিন রুবেল, আনোয়র হোসেন, সাজ্জাদুর রহমান, লোকমান হাকিম, আমিরুল ইসলাম জনিসহ বেশ কয়েকজন অতর্কিতে হামলা চালায়।
আসাদুজ্জামান আসাদ আরও বলেন, বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু এবং বর্তমান এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের যোগসাজসে আমার ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। আমার বা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর মৃত্যু হলে তারাই দায়ী থাকবেন।
এদিকে, আসাদের ওপর হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে তৌহিদুর রহমান লিটন বলেন, আমরা মিছিল শেষ করে থানা মোড়ে আসার পরে শুনতে পাই আসাদের ওপর হামলা হয়েছে। সেখানেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আমাদের আসাদের বাড়ির দিকে যেতে বাধা দেয়। আসাদের ওপর কারা হামলা করেছে তা আমি জানি না।
অন্যদিকে, শফিকুল ইসলাম শিমুল দাবি করেন, তিনি এ হামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না। প্রকৃতপক্ষে ছাত্রলীগ নেতা জীবন হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরিকল্পিত মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
এছাড়া বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধ থেকে এ ঘটনা ঘটেছে। অথচ আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পুলিশ অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে। এখন নলডাঙ্গার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
অন্যদিকে, নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, আসাদ ফিরে আসার পর থেকই নলডাঙ্গা বাজারে উত্তেজনা চলছিল। যে কারণে বাজারের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। কিন্তু অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে তার ভাড়া করা বাসার সামনে আসাদ হামলার শিকার হন। তখন সেখানে কোনো পুলিশ ছিল না।
প্রসঙ্গত, ছাত্রলীগ নেতা জীবন হত্যায় অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় ফিরেছেন। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসম্পাদক জামিউল আলিম জীবন ও তার পিতাকে পিটিয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম করেন।
জামিউল আলিম জীবন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (রামেক) আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে ২৩ সেপ্টেম্বর বেলা ১টা ২০ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আসাদ। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন তিনি।
এর মধ্যে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত দলীয় চেয়ারম্যান এবং নলডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য হিসাবে দায়িত্বরত আসাদকে দলের সকল শাখার সদস্য পদ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
সান নিউজ/কেএমএল