এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ‘হুনতাছি শেখের বেডি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নাকি যাদের ঘর নাই, তাদের বেহেইরে ঘর দিতাছে। আমার একটু জাগা (জমি) আছিন। চাইরডা (চারজন) জ্বি-পুত লইয়া মেলা (অনেক) কষ্টে দিন পার করতাছি। শীতের দিন আইছে ভাঙা ঘরে জ্বি-পুতরারে লইয়া কেমনে থাকবাম? বাজান সরকারকে একটু কইয়া (বলে) যদি আমারে একটা ঘর ও একটা বিধবা কার্ডের ব্যবস্থা করে দিতেন তাইলে জ্বি-পুতটিরে লইয়া শেষ জীবনে শান্তিতে থাকতে পারতাম।’
আরও পড়ুন: পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার শিমরাইল গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের স্ত্রী বিধবা শিউলি আক্তার (৪০)।
শিউলি আরও জানান, বছরখানেক আগে তার স্বামী নজরুল ইসলাম ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। স্বামীর ক্যান্সারের সময় চিকিৎসা বাবদ সব টাকা তাদের শেষ হয়ে গিয়েছে। তারপর থেকেই স্বামীহারা সংসারে শুরু হয়েছে তীব্র অভাব। শিউলি আক্তারের রয়েছে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রাসেল ঢাকায় থাকেন। খোঁজ খবর নেয় না মায়ের। একমাত্র মেয়ে কাকলী (১৩)। টাকার অভাবে তার লেখাপড়াও বন্ধ। আর ছোট দুই ছেলে রাকিবুল ইসলাম (৯), রবিন (২) এতিম হয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মানুষের মুখের দিকে। আজ পর্যন্ত কাউন্সিলর বা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা একটা বিধবা কার্ডের ব্যবস্থাও করে দেয়নি।
আরও পড়ুন: আবারও ক্ষমতায় জিনপিং
জানা যায়,সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও অসহায় দরিদ্রদের মাঝে আশ্রয়ণের ঘর দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপে। কিন্তু ভাঙা জরাজীর্ণ ঘরে দিন কাটানো বিধবা কোন ঘর ও বিধবা কার্ডও পায়নি।
সরজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ভাঙা একটি ঘরে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে থাকেন বিধবা শিউলি। ঘরের বেড়া ও টিনের চালা নেই বললেই চলে। ঘরের উপরের চাওনিতে অসংখ্য ফুটো। যেকারণে নরমাল কার্পেট দিয়ে মোড়ানো হয়েছে ঘরের চালা। বৃষ্টি আসলে পানিতে ভিজে যায় শরীর। আর নষ্ট হয় সংসারের জিনিসপত্র। রাতের কুয়াশায় ভিজে যায় কাতা-কম্বল। ভাঙা বেড়া দিয়ে আসে শীতল হাওয়া। এভাবেই ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কষ্টের প্রহর পার করে চলছেন প্রতিনিয়ত। এ অবস্থায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি পাওয়ার দাবি তার।
আরও পড়ুন: বিএনপির কেউ গ্রেফতার হয়নি
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিংকন বলেন, অসহায় বিধবা শিউলি আক্তারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দিলে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকতে পারত। সে ঘর পাওয়ার উপযোগী বিধবা এক নারী। আর বিধবা কার্ডের বিষয় আমি দেখতেছি।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (২১ অক্টোবর) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, শিউলি যদি ঘর তৈরির টিনের জন্য আবেদন করেন বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এছাড়াও ভবিষ্যতে যদি ‘জমি আছে ঘর নেই প্রকল্প’ শুরু হয় তখন শিউলি আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে একটি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
সান নিউজ/কেএমএল