এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি : মাথায় বাক্সভর্তি আইসক্রিম। হাতে একটা ঝনঝনানি। নাড়ছেন আর ডাকছেন -এই আইসক্রিম লাগবে আইসক্রিম? বিক্রেতাকে ঘিরে ধরে টাকা-চালের বিনিময়ে শিশুরা আইসক্রিম কেনে। গ্রামে এটি একসময়ের চিরচেনা দৃশ্য। এখন এমনটা খুব বেশি দেখা না গেলেও একেবারে ফুরিয়ে যায়নি।
আরও পড়ুন : আইসিটিতে সকলের দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে
শনিবার (১৫ অক্টোবর) ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের (৩নং) ওয়ার্ডের- এক নম্বর মোড়ে গেল এমন দৃশ্য। নজরুল ইসলাম খাঁ(৬০) নামের এক আইসক্রিম বিক্রেতা টাকা ও চালের বিনিময়ে আইসক্রিম বিক্রি করছিলেন।
তিনি বিভিন্ন উপজেলার ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে ঘুরে বিক্রি করেন আইসক্রিম। তাঁর বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দড়িপাঁচাশি গ্রামে। মাথায় বাক্সভর্তি আইসক্রিম নিয়ে বিক্রি করছিলেন তিনি। হাতে একটা ঝনঝনানি নিয়ে কিছুক্ষণ পরপর নাড়ছেন। আর একটু দূর যাওয়ার পর মাথা থেকে বাক্স নামিয়ে বাক্সের উপরের অংশ সজোরে বন্ধ করতে করতে আওয়াজ তুলেছিলেন।
আর সেই ঝনঝনি ও বাক্সের আওয়াজে সড়কের আশপাশের বাড়ি থেকে শিশুরা দৌড়ে বের হয়ে তাঁকে থামিয়ে আইসক্রিম কিনছে। আইসক্রিম কিনতে আসা শিশুদের মধ্যে প্রায় সবার হাতেই দু'টাকা - পাঁচ টাকার নোট ও কৌটা ভর্তি চাল। বিক্রেতা বিনিময়ে আইসক্রিম তুলে দিচ্ছেন শিশুদের হাতে।
আরও পড়ুন : আবদুল মালেক উকিলের মৃত্যুবার্ষিকী
আছেন ৩০ বছর ধরে। স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো সংসার চালান আইসক্রিম বিক্রির টাকায়। তবে ধানের মৌসুমে তাঁকে কৃষিকাজও করতে হয়। বছরে সাত-আট মাসের মতো আইসক্রিম বিক্রি করেন।
নজরুল ইসলাম বলেন, তাঁর পরিবারে রয়েছে স্ত্রী-সন্তানসহ সাত জন সদস্য। চার ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলেরা বিভিন্ন পেশায় যুক্ত। কেউ কৃষি কাজ করেন,কেউ গাড়ি চালায়। কিন্তু তিনি এখনো আইসক্রিম বিক্রি ধরে রেখেছেন। প্রকৃতিতে শীত নেমে এলে আইসক্রিম বিক্রি হয় না। তবে গরম পড়তে শুরু করলে প্রায় প্রতিদিন আইসক্রিম বিক্রি করতে বের হন তিনি।
ঈশ্বরগঞ্জে বেশ কয়েকটি আইসক্রিম কারখানা আছে। তিনি বিভিন্ন কারখানা থেকে আইসক্রিম সংগ্রহ করে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েন। এক বাক্স আইসক্রিম বিক্রি করতে পারলে দৈনিক ৩৫০-৪০০ টাকা রোজগার করতে পারেন। সেই টাকায় সন্ধ্যায় বাজার সদায় নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন। কোনো কোনো দিন ২-৩ বাক্স পর্যন্ত আইসক্রিম বিক্রি হয়। নজরুল ইসলামের বাক্সে থাকা আইসক্রিমের মূল্য ৫ টাকা।
আরও পড়ুন : ইসলামী সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবকলীগের অবস্থান
এই পেশায় কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালোই তো। বেচাকেনা আছে মোটামুটি। পোলাপান এই আইসক্রিম পছন্দ করে। প্যাকেট আইসক্রিমের দাম তো অনেক, ২০-৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না। এই জন্য এই আইসক্রিমের চাহিদা আছে। কিন্তু এখন আয়ের সাথে ব্যয়ের মিল নেই, সব জিনিসের দাম বাড়তি। কোন মতে বেচে আছি।
আইসক্রিম কিনতে আসা এক শিশুর সঙ্গে কথা হয়। সে এক বাটি চাল নিয়ে এসে ৩ টি আইসক্রিম কেনে।
শিশুটি জানায়, বাড়িতে আরও দুই-তিনজন আছে। তাদের জন্য আইসক্রিম কিনে নিচ্ছে সে। আরেকটি শিশু বলে, সে শহরের স্কুলে পড়ে। ওই স্কুলের পাশে পাওয়া আইসক্রিমের দাম বেশি। তা ছাড়া বাক্স থেকে কেনা আইসক্রিম খেতে ভালো লাগে তার।
আরও পড়ুন : নারী পুলিশের হাত কামড়ে পলায়ন
নজরুল ইসলাম খাঁ বলেন, চাল দিয়ে আইসক্রিম বিক্রি করলে নগদ টাকার চেয়ে বেশি লাভ থাকে। কিন্তু এখন শরীলে আর বেশি কুলায় না। চালের বস্তা ও আইসক্রিম বাক্স এখন আর একসাথে টানতে পারি না। তাই চালের বিনিময়ে এখন আইসক্রিম কম বেচি( বিক্রি করি)। লাভ কিছু কম হলেও নগদ অর্থে বিক্রি করি। তাই আজকাল ধান-চালে আইসক্রিম বিক্রি উঠে যাচ্ছে।
সান নিউজ/এইচএন