এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) : নারীরা মাথা আঁচড়ানোর পরই উঠে আসা চুল ফেলে দেন। আবার অনেকে জমান। আর সেই জমানো চুল কেনেন ফেরিওয়ালারা। সেই চুলে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে হাজারো মানুষের।
আরও পড়ুন : নজর কেড়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেল জাদুঘর
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে কর্মসংস্থান হয়েছে এ পেশায় যুক্ত অনেক মানুষের। বেঁচে থাকার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছেন তারা। পাল্টে গেছে এলাকার চুলের ব্যবসার সাথে জড়িত মানুষের ভাগ্য।
কে জানত নারীদের ফেলে দেওয়া মাথার চুলই হবে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থান, পাল্টে দেবে ভাগ্য। ফেলে দেওয়া চুলে জীবিকা মিলবে তাদের।
সরজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এই ফেলে দেওয়া চুল সংগ্রহকারী ফেরিওয়ালাদের। তারা জীবিকা নির্বাহ করছে এই চুল ব্যবসায়। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা। আবার অনেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে এ পেশার সাথে যুক্ত আছেন।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে সাজা প্রাপ্ত আসামি গ্রেফতার
গত শুক্রবার (৭ অক্টোবর) কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় চুলের বিনিময়ে নানা রকম জিনিস বিক্রেতা মোঃ হাবিবুরের সাথে। তার বাড়ি রাজশাহী বিভাগের শিবগঞ্জ থানার জুম্মনপুর গ্রামে। তিনি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা ইউনিয়নের উচাখিলা বাজারে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, চুলের বিনিময়ে থালি-বাটি,মেয়েদের সাজসজ্জার পণ্য ও ছোট বাচ্চাদের খেলনা দিয়ে থাকি। দুই মুঠো চুল দিয়ে থালাবাসন, আর এক মুঠো চুল দিয়ে সাজসজ্জার জিনিস ও খেলনা দিয়ে থাকি।
আরও পড়ুন : বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহীর মৃত্যু
সারাদিন গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঘুরে চুলের বিনিময়ে বেচাকেনা শেষে রাজিবপুর ইউনিয়নের মধুপুর বাজারে চুল কেনার আড়তে বিক্রি করি। এতে দৈনিক ৪০০-৫০০ লাভ হয়। তা দিয়েই চলে কোন রকম।
উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা কামাল নামের এক ফেরিওয়ালা বলেন, চুলের বিনিময়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে এসব বিক্রি করে কোন মতে চলে জীবন। তবে এখন আগের মতো লাভ হয় না। চুলও বেশি পাওয়া যায় না। সব জিনিসের দাম বাড়ছে, আয়ের সাথে ব্যয়ের মিল নেই।
পৌর এলাকার দত্তপাড়া গ্রামের গৃহিণী রোজিনা খাতুন বলেন, একসময় দেখা যেতো মা-বোনরা চিরুনি দিয়ে মাথা আঁচড়াতো। একে অপরের চুল আঁচড়িয়ে দিতো। বিকেল বেলা বাড়ির উঠোনে বা ঘরের বারান্দায় চলতো চুল আঁচড়ানোর প্রতিযোগিতা। আঁচড়ানের সময় চিরুনিতে কিছু ছেঁড়া চুল লেগে থাকতো। সেগুলো মুড়িয়ে থুতু দিয়ে ফেলে দিতো বা মাটিতে গর্ত করে পুঁতে রাখতো।
আরও পড়ুন : আদিবাসী ব্যতীত সনদ না দেয়ার দাবি
যুগের পরিবর্তনে বদলে গেছে অনেক কিছুই । এখন আর কেউ চুল ফেলে দেয় না। আমরা মাথার পরিত্যক্ত চুল মুড়িয়ে ঘরের কোণে বা কোনও পটের ভেতর ভরে রাখি।
সময়মত এগুলো দিয়ে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে নানারকম জিনিসপত্র সহ শিশুদের হরেকরকমের খেলনা রাখি।
উপজেলার মধুপর বাজারের চুলের আড়তদার মাসুম মিয়া জানান, গ্রাম ও শহর থেকে চুল সংগ্রহ করে তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য গরিব ফেরিওয়ালারা পায় তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক।
আরও পড়ুন : টিকটক করে শাস্তি পাচ্ছেন ১৩ পুলিশ
তিনি আরও জানান, স্থানীয় ফেরিওয়ালারা নিজ থেকেই প্রতিদিন এ ব্যবসা করেন। আর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ফেরিওয়ালারা প্রথমে একটা বাসা ভাড়া নেয়। তারপর ধারেকাছের একটা মার্কেট থেকে মেয়েদের মাথার ব্যান্ড, কিছু শিশু খাবার, রঙবেরঙের বেলুন, ক্লিপ, চিরুনি, চুলেরকাঁটা, ফিতা, কাচের চুড়ি, বেলুন, বাদামভাজা কিনে আনে।
এগুলোই হচ্ছে চুল সংগ্রহকারীদের মূল চালান। এগুলো একটা চালের প্লাস্টিকের ব্যাগের বাইর সাইটে সেফটিপিন দিয়ে আটকায়। ব্যাগের দুইদিকেই ঝুলানো থাকে পোলাপানের খেলনা, মাথার ব্যান্ড, আর মহিলাদের সাজগোছের মালামাল।
পরিত্যক্ত চুলের ব্যবসায় কর্মসংস্থান বাড়ছে। সাথে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। স্বনির্ভর হচ্ছে আমাদের অর্থনীতি।
সান নিউজ/এইচএন