কামরুল সিকদার, বোয়ালমারী (ফরিদপুর) : ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে এক জামায়াত সমর্থক কম্পিউটার ব্যবসায়ী কর্তৃক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাধার মুখে ওই ব্যবসায়ী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে জাল জন্ম নিবন্ধন সনদের ব্যবসা করতে না পেরে এ ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন : ত্রিশালে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা
সোমবার (১০ অক্টোবর) এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ একজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে।
জানা যায়, ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এজন্য নতুন ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জন্মনিবন্ধন সনদ আবশ্যক। অন্যান্য স্থানের মতো বোয়ালমারী উপজেলার শেখর ইউনিয়নের বিভিন্ন কম্পিউটার দোকানদাররা জন্মনিবন্ধন সনদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের জন্মনিবন্ধন সনদ প্রিন্ট করে দিচ্ছেন।
কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার শেখর ইউনিয়নের সহস্রাইল বাজারের রংধনু কম্পিউটারের মালিক কিবরিয়া মোল্যা জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আরও পড়ুন : মফস্বল সাংবাদিকতায় সম্মাননা পেলেন আব্দুল্লাহ আল-মাসুদ
রোববার (৯ অক্টোবর) সকালে রংধনু কম্পিউটার থেকে প্রিন্টকৃত এ রকম ৫টি জাল জন্মনিবন্ধন সনদ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ইউনিয়ন পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে গেলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ কম্পিউটার ব্যবসায়ী কিবরিয়াকে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করতে নিষেধ করেন। কিবরিয়া ভুল হয়েছে স্বীকার করলেও পরবর্তীতে আরও দুটি জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেন। এরপর চেয়ারম্যান আবারো তাকে নিষেধ করলে আর ভুল হবে না বলে কিবরিয়া অঙ্গীকার করেন। এরপর বিকেলে আরও একটি জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করলে চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ তাকে চৌকিদার দিয়ে ডেকে এনে ধমক দেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কিবরিয়া মোল্যা স্থানীয় বিএনপি কর্মী জিল্লুর, সেন্টু, সহোদর সুমন, রোমানসহ ৩০/৪০ জনের সহায়তায় বিকেল ৫টার দিকে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষের ল্যাপটপ, স্ক্যানার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় অফিস কক্ষে টাঙানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর করা হয়।
আরও পড়ুন : হয়রানির প্রতিবাদে গ্রামবাসীর মানববন্ধন
এ ঘটনায় দুষ্কৃতিকারীরা ইমরান হোসেন নামের ইউনিয়ন পরিষদের এক স্টাফকে মারধর করে। এ ঘটনায় সোমবার দুপুরে চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বাদি হয়ে সৈয়দ জিল্লুর রহমান, মো. রুমান মোল্যা, মো. সুমন মোল্যা, কিবরিয়া মোল্যা, সৈয়দ মানিকসহ ১০ জনের নামোল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত ৩০/৪০ জনের বিরুদ্ধে বোয়ালমারী থানায় মামলা করেছেন।
পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আব্দুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেফতার করে ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়েছে।
জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করার অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত কিবরিয়া মোল্যাকে বারবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার রংধনু কম্পিউটার নামের দোকানটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন : নোয়াখালীতে ৫ জেলেকে জরিমানা
এ ব্যাপারে শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির কর্মীরা আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। জাল জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করতে নিষেধ করায় তারা আমার কার্যালয়ে টাঙানো বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে গেছে। এছাড়া ড্রয়ারে রাখা হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে সংগৃহীত ২লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং বাজার বণিক সমিতির ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে।
বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু তাহের বলেন, সোমবার দুপুরে এ ঘটনায় বোয়ালমারী থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আব্দুল্লাহ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতকে দুপুরে ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন