সান নিউজ ডেস্ক: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নাটোরের সিংড়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফতাব উদ্দিন (৫০) ও রুহুল আমিন (৪৫) নিহত হয়েছেন। এ সংঘর্ষে আরও আহত হয়েছেন সুকাশ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম এবং প্রতিপক্ষ কুদ্দুস-ফরিদ গ্রুপের অনুসারী মাসুদ ও মুসাসহ তিনজন। তাদের মধ্যে তিনজনকেই উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিয়ের চার মাসেই যমজ ছেলের মা!
রোববার (১০ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের বামিহাল বাজারে হামলা-পাল্টা হামলার এ ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ কুদ্দুস ওই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবং দুইবারের বিএনপি সমর্থিত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী। কুদ্দুসের ভাই ফরিদ ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। আর নিহত রুহুল আমিন সুকাশ ইউনিয়নের বামিহাল গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বর্তমান ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলামের অনুসারী বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, নিহত আফতাব উদ্দিন উপজেলার সুকাশ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য। তবে সিংড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, ২০১৯ সালে আফতাব এবং ফরিদ গ্রুপের মধ্যে এক সংঘর্ষে ফরিদ গ্রুপের মোর্শেদুল ইসলামের পা কেটে দেওয়ার ঘটনায় আফতাব উদ্দিনকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
আরও পড়ুন: নাইজেরিয়ায় নৌকাডুবি, নিহত ৭৬
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সাবেক ইউপি সদস্য আফতাব ও বর্তমান ইউপি সদস্য ফরিদুলের মধ্যে বামিহাল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। সম্প্রতি ফরিদুল ইসলামের সমর্থক দুলাল আকন্দের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ চোরাই বৈদ্যুতিক মোটর উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা গ্রেফতার হন। কয়েক দিন আগে তারা জামিনে বের হয়ে আসার পর থেকে এলাকায় উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
এরই জেরে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আফতাবের নেতৃত্বে তার কয়েকজন অনুসারী বর্তমান ইউপি সদস্য ফরিদুল ইসলামের অনুসারী রুহুল আমিন ও আবু মুসার দোসাপাড়ার বাড়িতে হামলা চালান। এর জেরে কিছুক্ষণ পর রুহুল ও মুসা তাদের লোকজন নিয়ে বামিহাল বাজারে এসে সেখানে থাকা প্রতিপক্ষ আফতাবের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।
আরও পড়ুন: আ’লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
এছাড়া সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ২০-২৫ জন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। একপর্যায়ে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। আতঙ্কে লোকজন বাড়িতে চলে যান। এ সময় আফতাব ও আবুল কালামকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আফতাব উদ্দিনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
অন্যদিকে, রুহুল আমিন সোমবার (১০ অক্টোবর) ভোর সোয়া চারটার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। রুহুল আমিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম।
আরও পড়ুন: শুভ্র হত্যা: ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড
এর আগে আফতাবের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালে পাঁচজনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হওয়ায় হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। আহত চার জনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান জানান, সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। একজন নিহত ও চার জন আহত হয়েছেন। তবে সংঘর্ষের সময় গোলাগুলির কথা শুনিনি।
আরও পড়ুন: টিপুর দায় স্বীকার
এছাড়া নাটোরের পুলিশ সুপার মো. সাইফুর রহমান জানান, ঘটনার পর ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত আফতাব হোসেনের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া হামলাকারীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/কেএমএল