ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার মীর মাহবুব হোসেন সুমন (২৫) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার হয়েছে।অপহরণের ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও তার সন্ধান মিলেনি। এবিষয়ে থানায় থানায় জিডি বা মামলা করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন পরিবারটি।পীরগন্জ থানা বলছেন অভিযোগ দিতে হবে বোচাগন্জ থানায় আর বোচাগন্জ থানা পাঠাচ্ছেন পীরগন্জ থানায়।২ থানায় ঘুরতে ঘুরতে কাহিল হয়ে পড়েছেন অপহৃতের অভিভাবকরা।
আরও পড়ুন : বন্দুক হামলায় মেয়রসহ নিহত ১৮
মীর মাহবুব হোসেন সুমন পীরগঞ্জ উপজেলার করনা মীরপাড়া গ্রামের হাসান আলীর ছেলে ও নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষের ছাত্র।
বুধবার (০৫ অক্টোবর ) রাত ১১ টার দিকে সুমনের পরিবার জানান, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সকালে সুমন বাড়ি থেকে তার মাকে ডাক্তার দেখানোর জন্য মোটর সাইকেলে করে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে পীরগঞ্জ উপজেলার সাগুনী ব্রিজের পার্শ্বে বোচাগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলার মাঝামাঝি জায়গায় তাদের পথরোধ করে ৫ জন সাদা পোশাক ধারী ব্যক্তি। তারা মোটর সাইকেলের কাগজ পত্র দেখতে চেয়ে সুমনকে রাস্তার সাইডে নিয়ে গিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
এরপর থেকে ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও সুমনের কোন সন্ধান না পাওয়ায় তার পরিবার হতাশ ও দু:শ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছে। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে পীরগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে বোচাগঞ্জ থানায় দেখিয়ে দেন আর বোচাগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে পীরগঞ্জ থানায় দেখিয়ে দেন। এতে পরিবারটি পড়েছেন বিপাকে।
সুমনের মা মাহমুদা বেগম বলেন, আমি ও আমার ছেলে মোটর সাইকেল যোগে দিনাজপুরে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পথে সাগুনী ব্রিজ অতিক্রম করে একটু সামনে গেলেই আমাদের পথরোধ করে ৫ জন লোক। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার ছেলেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যান তারা। আজ থেকে ৬ দিন অতিবাহিত হলেও সন্ধান মেলেনি আমার ছেলের।
বাবা মীর হাসান আলী বলেন, আমাদের সব আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে সহ অনেক জায়গায় খোঁজা খুঁজি করেও ছেলের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পীরগঞ্জ থানায় জিডি করতে গেলে সেখানকার থানা পুলিশ দেখিয়ে দেয় বোচাগঞ্জ থানায়। আর বোচাগঞ্জ থানায় গেলে তারা দেখিয়ে দেয় পীরগঞ্জ থানায়। কিন্তু দুই থানার এক থানায়ও জিডি জমা নিচ্ছেন না। আমরা এখন কোথায় যাবো কি করবো। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি আমার সন্তান ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেন তিনি।
জিডি না নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেহেতু ঘটনাটি বোচাগঞ্জ থানা এরিয়ায় ঘটেছে সেহেতু সেই থানায় তাদের জিডি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।,
অন্যদিকে সুমন অপহরণের বিষয়ে থানায় তার পরিবারের জিডি না নেওয়ার অভিযোগটি অস্বীকার করে বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা থানা পুলিশ জিডি (সাধারণ ডায়েরি) ও মামলা নেওয়ার জন্যই আছি। সুমনের বিষয়ে থানায় এক ভদ্রলোক এসে বলেছিল যে, তার ছেলে নিখোঁজ। তার কথা অনুযায়ি আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শ করি। কিন্তু ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে সে জায়গাটি আমার থানার এরিয়ায় না। সেটি ঠাকুরগাঁও এরিয়ায় ঘটেছে। আমার এরিয়ায় হলে আমরা অবশ্যই জিডি বা মামলা নিবো। তার পরেও আমরা আমাদের থানা এলাকায় ছেলেটির খোঁজ খবর নিচ্ছি খোঁজ পেলে তার পরিবারকে জানানো হবে।
এছাড়াও দিনাজপুরের কাহারোল ও বোচাগঞ্জ সার্কেল এর সহকারি পুলিশ সুপার মো. রওশন আলী বলেন, যেহেতু তাকে অপহরণ করা হয়েছে তাহলে থানায় জিডি হবে কেন। এক্ষেত্রে থানায় অপহরণ মামলা করতে হবে। আর যেহেতু ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ভিকটিম নিখোঁজ বা অপহরণ হয়েছে সেক্ষেত্রে ভিকটিমের নিজ থানায় অর্থাৎ ভুক্তভোগী যে এলাকার বাসিন্দা সে এলাকার থানায় মিসিং জিডি বা অপহরণ মামলা করতে হবে।
সুমনের বড় ভাই মামুন বলেন, ‘আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ থানায় ৬ অক্টোবর বুধবারেও গিয়েছি। কোন থানায় আমাদের জিডি জমা নেননি ।এমনকি তারা আমাদের কোন ধরণের পরামর্শও দেননি। তারা যদি বলতো এ বিষয়ে মামলা দিতে হবে তাহলে আমরা মামলাই দিতাম।
সান নিউজ/এসআই