এহসানুল হক (ঈশ্বরগঞ্জ ) : 'আমার একটা হার বাছুরসহ (ষাঁড় বাছুরসহ) দুধের গাই(গাভী)আছিন। বনের (খড়ের) অভাবে ও খইল-ভুসিসহ গরুর খাওনের (গো-খাদ্যের) দাম যে বাড়া দিছে। অহন তো নিজেরাই খাইতে পারি না, গরুরে কেমনে খাওয়াইয়্যাম? এই কারণে কয়েকদিন অইছে ৬০ আজার (হাজার) ট্যাহা বেইচ্ছালছি।' এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকার শিমরাইল গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম (৩৮)।
আরও পড়ুন : আপনারা ভয় পাবনে না
গরুর অন্যতম খাদ্য খড়ের সংকটে বিপাকে খামারিরা।ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার পৌর বাজার এবং ইউনিয়ন কেন্দ্রিক বাজারে প্রকারভেদে প্রতি আঁটি খড় বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩৫ টাকা দরে। অতিরিক্ত খরচের কারণে খড় কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন গরুর মালিকেরা। বছরের এই সময়টাতে খড় সংকটের বিষয়টি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও এবার কৃষকসহ খামারিরা খড়ের জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চাহিদার তুলনায় খড়ের জোগান কম থাকায় দামও বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এ কারণে এখন বাজারে শাকের মতো আঁটি সাঁজিয়ে বিক্রি হচ্ছে খড়।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় রেজিস্ট্রার ও নন রেজিস্ট্রারসহ ছোট বড় মিলিয়ে গবাদিপশুর খামার রয়েছে ২৮০ টি। যেখানে মোট গরুর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ৯৪৯ টি। এ ছাড়া পারিবারিকভাবে অনেকেই নিজ বাড়িতে পালন করেন গবাদিপশু। এসব পশুকে প্রায় ৪ মাস বোরো ধানের খড় ও ৮ মাস আমন ধানের খড় খাওয়ানো হয়। এবার বোরো মৌসুমের মাঝামাঝি সময় থেকে বৃষ্টি হওয়ায় ধানের খড় শুকাতে পারেননি কৃষকেরা। এতে পচে গেছে বিপুল পরিমাণ খড়। ফলে উপজেলায় খড়ের সংকট দেখা দিয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ বছর উপজেলায় আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৯২৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। হাইব্রিড ৭৫০ হেক্টর, উফশি ১৮১৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হবে। অর্থাৎ নতুন খড়ের জন্য কৃষকদের এখনো প্রায় দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। এ অবস্থায় সংকটে অনেকেই বিক্রি করছেন শখের গরু।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পৌর শহরের কাঁচামাটিয়া নদীর পুরোনো ব্রিজের ওপর খড় বেচাকেনার দৃশ্য। উপজেলার দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা প্রান্তিক কৃষকসহ ছোট খামারিদের সংখ্যাই বেশি। সেখানে প্রতি আঁটি খড় ২৫ -৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ঈশ্বরগঞ্জ বাজারে খড় কিনতে আসা গরু খামারি নাঈম বলেন, এবার বোরো মৌসুমে খড় শুকানোর সুযোগ পাইনি। শেষের দিকে বৃষ্টির পানিতে সব খড় নষ্ট হয়ে গেছে। যেটুকু সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম তাও শেষ। আমন ধান ঘরে না ওঠা পর্যন্ত খড় কেনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। গরু নিয়ে খুব বিপদে আছি। প্রতিদিন বাজার থেকে ২৫-৩৫ টাকা কেজি দরে খড় কিনতে হচ্ছে।
খড় কিনতে আসা পার্শ্ববর্তী এলাকার কানুরামপুরের গরুর খামারি হারুন বলেন, নিজে কিছু জমি করছিলাম। সেই জমির খড় শেষ হয়ে গেছে। তাই প্রতিদিন বাজার থেকে ৩০-৩৫ টাকা আঁটি দরে কিনে আনতে হয়।
পৌর বাজারের পুরাতন ব্রিজে খড় বিক্রেতা উপজেলার কাকনহাটি গ্রামের আব্দুস ছাত্তার(৬০), চরশিহারী গ্রামের রহিম(৫০), মাঝিয়াকান্দি গ্রামের বাবুল মিয়া (৫১) বলেন, আমরা পার্শ্ববর্তী উপজেলা তাড়াইল, কেন্দুয়া ও নেত্রকোনা থেকে খড় কিনে এনে বিক্রি করি। বিভিন্ন জাতের খড়ের মধ্যে রয়েছে কালিজিরা, রঞ্জিত, আইজং,বীরই জাতের খড়। এসব এলাকা থেকে খড় কিনে পরিবহন খরচ বাদে আঁটি প্রতি ৩-৪ টাকা লাভহয় । দৈনিক গড়ে পাঁচ থেকে বিশ হাজার টাকা পর্যন্ত খড় বিক্রি করা যায়।
আরও পড়ুন : ৩০০ প্রবাসীকে অজ্ঞান, গ্রেফতার ৪
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ আবু হানিফ বলেন, 'অনেক কৃষকের সংরক্ষণ করা খড় শেষ হয়ে গেছে। এ কারণে উপজেলার কিছু কিছু জায়গায় খড়ের সংকট দেখা দিতে পারে। তবে আমরা কৃষকদের খড়ের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা ও উন্নতজাতের ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি উন্নত জাতের ঘাস- যেমনঃ নেপিয়ার, পাকচং ,জার্মান,পারা ঘাস চাষ করার জন্য খামারিদের পরামর্শ দিয়েছি। আমন ধান কাটা শুরু হলেই খড়ের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
সান নিউজ/এসআই