মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পরে গভীর রাতে মুন্সীগঞ্জ শহরের উপকন্ঠ মীরেশ্বরাই গ্রামে খালাসীবাড়িতে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ভাগ্নের সুতার কারখানায় আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আরও পড়ুন : যুদ্ধ অবসানে প্রধানমন্ত্রীর ছয় দফা
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জেলা বিএনপির আহবায়কের ভাগ্নে নিজাম উদ্দিন মেম্বারের সুতা তৈরির কারখানায় আগুনের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারখানাটির পাশের অন্তত ৪টি বসতঘর ও ১টি কোচিং সেন্টার আগুনে পুড়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, শহরের উপকন্ঠ মুক্তারপুর এলাকার পুরাতন ফেরিঘাটে বুধবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে মুক্তারপুরসহ আশপাশের এলাকা গুলোতে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো। মানুষজন যে যার ঘরে ঘুমিয়ে ছিল।
গভীর রাতে আগুনের পোড়া গন্ধে তাদের ঘুম ভেঙ্গে যায়। দেখতে পান নিজামউদ্দিনের সুতার কারখানায় দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। ওই আগুন পার্শ্ববর্তী ঘর গুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : বিক্ষোভে উত্তাল ইরান, নিহত ৯
বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪ টার দিকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।
সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুল হাইয়ের ভাগ্নে নিজাম উদ্দিন অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জের ধরেই তার সুতার কারখানায় আগুনে দেওয়া হয়েছে।
সদরের পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ'লীগের নেতা গোলাম মোস্তফার লোকজন সুতার কারখানায় আগুন দিয়েছে বলে দাবী করেন তিনি। তার দাবী আগুনে ৭০-৮০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : সরকারি চাকরিতে ৩৯ মাস ছাড়
তিনি আরও বলেন, আ'লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। তাদের মামলার আসামি করার হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন।
এদিকে, আগুনে সুতার কারখানার পার্শ্ববর্তী রমজান মিয়া ও রেশিয়া বেগমের বসতঘর পুড়ে গেছে। রমজান মিয়া বলেন, বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। আমরা তো বাড়িতেই ছিলাম। আর ওই ঘটনার জের ধরে বিএনপি নেতার ভাগ্নে সুতার কারখানায় আগুনে দিলো। সেই আগুনে আমাদেরও ঘর পুড়ে গেলো।
সুতার কারখানার পাশের বাড়ির ভাড়াটিয়া নয়ন বিশ্বাস (২৪) বলেন, বোন মনি আমাকে কারখানায় রাত ২ টার দিকে গিয়ে বলে, আমাদের ঘর আগুনে পুড়ে গেছে। পাশের কারখানা থেকে আগুন লাগে তাদের ভাড়া ঘরে।
আরও পড়ুন : বাইডেনের অভ্যর্থনায় প্রধানমন্ত্রী
আরও বলেন, বোনের পরিবারের সাথে আমিও পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতাম। ঘরে ৭০ হাজার টাকাও ছিল। নতুন ফার্নিচার গুলোও নেই। নিঃস্ব হয়ে গেছি।
মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার আব্দুর রকিব জানান, গভীর রাত ২ টার দিকে আগুনের খবর পান তারা। তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দীর্ঘ সময় চেষ্টা চালিয়ে ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন তারা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অর্থ) সুমন দেব বলেন, সুতার কারখানায় আগুনে দেওয়ার সময় সেখানে কোনো পুলিশ ছিলো না। কারা আগুন দিয়েছে তা জানা নেই। ক্ষতিগ্রস্থদের পক্ষ থেকে অভিযোগ দেওয়া হলে খতিয়ে দেখা হবে। ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন : মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার ৪৪
আরও বলেন, পুলিশ উপর হামলা, গাড়ি পোড়ানো ঘটনায়, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। হামলার ঘটনায় ২৪ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা আগুন দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী করেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় আমরা চিন্তিত। আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে আছি। আজ জেলার দলীয় কার্যালয়ে সভা আছে। সেখান থেকে আমাদের পরবর্তী করনীয় কি-তা আলোচনা করা হবে।
সান নিউজ/এইচএন