এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বিস্তীর্ণ আমনের খেত ভরে উঠেছে সবুজে। এ যেন বাংলার চিরাচরিত রূপ। মাঠে মাঠে আমন ধানের সঙ্গে দোলা খাচ্ছে কৃষকের মন। চলতি আমন মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলনের লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান।
আরও পড়ুন: কমেছে সংক্রমণ, বেড়েছে মৃত্যু
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টার দিকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের হারুয়া গ্রামের কৃষক চান মিয়ার আমন ধানের জমি পরিদর্শন করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।
এ সময় কৃষি কর্মকর্তার ব্যতিক্রমী নানা উদ্যোগে চান মিয়া, মোঃ বাচ্চু মিয়া, খোকন মিয়া, মামুনসহ কয়েকজন কৃষক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও নুসরাত স্যারের পরামর্শে আমরা কোন জমি পতিত না রেখে সব জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছি। এবার আমরা বাম্পার ফলনের আশা করছি।
আরও পড়ুন: সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ হবে
এদিকে, আমন মৌসুমে প্রত্যেক সারের ডিলারকে দোকানে মূল্য তালিকা টানানো,সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি, বিক্রয় রেজিস্টার, বিক্রয় রশিদ ব্যবহার, সারের আগমনী বার্তা প্রেরণ করার জন্য আমন মৌসুমের শুরুর দিকেই উপজেলা কৃষি অফিসার প্রত্যেক বিসিআইসি সার ডিলারদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী ডিলারা কাজ করছেন।
যারা নির্দেশনা অমান্য করে বেশি দামে সার বিক্রি করেছেন তাদেরকে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। নির্বিঘ্নে রোপা আমন ধান চাষাবাদের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসার ও তার মাঠ পর্যায়ের সহকারী অফিসারদের নিয়মিত সার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার বিষয়টির প্রশংসা করেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন: থেমে থেমে বৃষ্টি, দুর্ভোগে নগরবাসী
অপরদিকে, কৃষকরা যেন কোন ভাবেই ডিলার অথবা সার ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে প্রতারিত না হয় সেই জন্যে প্রতিনিয়ত খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। এছাড়াও প্রদর্শনী কর্মসূচীর আওতায় উপকারভোগী কৃষকদের সাফল্যগাঁথা রয়েছে মাঠ জুঁড়ে। উপজেলা কৃষি অফিসার ও উপসহকারী কৃষি অফিসারদের সঠিক পরামর্শে সফলতার দিক খুঁজে পেয়েছেন কৃষকরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৯২৭৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। যার মধ্যে হাইব্রিড ৭৫০ হেক্টর, উফশি ১৮১৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ৩৭৫ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: শেখ রেহানার জন্মদিন আজ
পৌর এলাকায় সরকার অনুমোদিত মেসার্স রউফ এন্টারপ্রাইজে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা উপ সহকারী কৃষি অফিসার আবুল খায়ের ডিলারের দোকান মনিটরিং করছেন। দোকানেই কথা হয় ডিলার এবং সার-কীটনাশক নিতে আসা কয়েকজন কৃষকদের সাথে।
এই বিষয়ে ডিলার মোঃ আব্দুর রউফ বলেন, আমার দোকানে সার এবং ক্রীটনাশকের মূল্য তালিকা টানিয়ে রেখেছি। সরকার নির্ধারিত দামেই আমরা বিক্রি করছি।
আরও পড়ুন: মা হচ্ছেন মাহি
সার নিতে আসা সৈয়দ ভাকুরি গ্রামের কৃষক সুমন এবং জাটিয়া ইউনিয়নের মালিয়াটি গ্রামের কৃষক এনামুল হক বলেন, ঈশ্বরগঞ্জে সারের কোন সংকট নেই। সরকারের দেওয়া নির্ধারিত দামেই আমরা সার ক্রয় করতে পারছি।
কৃষি অফিসে আমন ধানের পোকা ধরা গাছ নিয়ে আসেন সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক। তিনি জানান, ম্যাডাম ধান গাছ দেখে ওষুধ লিখে দিয়েছেন এবং তারপরও কোন সমস্যা হলে জানানোর জন্য নিজের ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তার নম্বর দিয়েছেন যোগাযোগ করার জন্য। তিনি খুব ভালো মনের মানুষ।
আরও পড়ুন: সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট শুরু
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা ও কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, চলতি আমন মৌসুমে কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে সার ও কীটনাশক ক্রয় করতে পারে এবং কোন অবস্থাতেই যাতে কৃষকরা সারের সংকটের মধ্যে না পড়ে আমাদের অফিস সেই ব্যাপারে সবসময় খোঁজ খবর নিচ্ছে। এছাড়াও কোন অবস্থাতেই যাতে উপজেলায় সারের কোন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে সেই ব্যাপারেও আমরা সজাগ রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৯ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।’
সান নিউজ/কেএমএল