ভোলা প্রতিনিধি: ভোলায় বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭,জেন্ডার সমতাও শিশু সুরক্ষা বিষয়ক দুদিনের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। রবিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ভোলা জেলা প্রশাসক মিলনায়তনে এই প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
সভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মামুন আল ফারুক এর সভাপত্বিতে প্রশিক্ষণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা জেলা বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী।
সভায় ভোলা জেলায় বাল্য বিবাহর হার কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাল্য বিয়ে রোধে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ যথাযথ প্রয়োগ এর মাধ্যমে বাল্য বিয়ে রোধে ভূমিকা রাখবে বলে বক্তরা জানান। প্রশিক্ষণে জেলা বাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্য বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কারিগরি সহযোগিতা ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থিক সহায়তায় আওতায় ভোলা জেলার ৩টি উপজেলায় ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পটিতে বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলন ভোলা জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি বাল্যবিবাহের হার কমিয়ে আনার জন্য জেলা বাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটি সদস্যদের নিয়ে এই প্রশিক্ষনের আয়োজন করেন।
সভায় জেলা প্রশাসক মো: তৌফিক-ই-লাহী চৌধুরী বলেন, ভোলা একটি দ্বীপ জেলা।
এই জেলায় নাানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে এখানকার মেয়েদের বেড়ে উঠতে হয়। এই জেলা বাল্য বিয়ের হার কমিয়ে আনার জন্য জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা, কাজী ঈমামদের নিয়ে সভাবেশ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অনেক অভিভাবক মেয়েদের জীবনের ঝুঁকির কথা চিন্তা না করে বিয়ে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, কিশোরী মেয়েদের ১৮ বছর আগে বিয়ে দেয়া শিশু অধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। এই বিয়েতে কিশোরীদের কোন মতামত নেয়া হয়না। বাল্যবিবাহের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নিজের মতো জীবন যাপন করতে পারে না ঐ কিশোরী।
এখনো ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই ৫১ ভাগ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে। করোনাকালে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে গেছে।
সরকারের সদিচ্ছার পাশাপাশি অভিভাবকদের সচেতনতা, আইনের প্রয়োগ, নজরদারি এবং সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো গেলে ভোলা থেকে বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে জানান।
কর্মশালায় অংশ নেয়া কোস্ট ফাউন্ডেশন এর চরফ্যাশন এর টিম লিডার রাশিদা বেগম বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে আমাদের হাজারো কিশোরী মেয়ের বাল্য বিয়ের কারণে তার স্বপ্ন ভঙ্গ হবে। শুধু তাই নয় যারা বাল্য বিয়ের সাথে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজি, পুরোহিত এবং জনপ্রতিনিধিদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে যারা বাল্যবিয়ের দাওয়াত খেতে যাবে তাদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই বাল্যবিবাহ বন্ধ সম্ভব হবে।
কর্মশালায় কর্মশালায় অংশ নেয়া ভোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এম হাবিবুর রহমান বলেন, বাল্য বিবাহর বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতিহারে বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার করতে হবে। বিশেষ করে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের এলাকা ভিত্তিক বাল্যবিয়ে রোধে সচেতনতা বাড়াতে হবে। ইউনিয়ন পর্যায়ে মাসিক সভায় ইউপি সদস্যদের নিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের পাশাপাশি বাল্য বিয়ে রুখতে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তামিম আল ইয়ামীন সভায় ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার তৌহিদুল ইসলাম, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল এর প্রজেক্ট ম্যানেজার মো: আবু সালেহ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল জেন্ডার স্পেশালিস্ট নাসরিন নাহার, সার্পোট ইন্ট্রিগেশন স্পেশালিস্ট শহিদুল ইসলাম, সুশীলন টিম ম্যানেজার মো: জিয়াউল হক, সুশীলন এর সহকারী পরিচালক শিরিনা আক্তার প্রমুখ।
সান নিউজ/এনকে