নিজস্ব প্রতিবেদক:
যশোর: সাংস্কৃতিক শহর যশোরে পুরো বছরজুড়ে লেগে থাকে নানা আয়োজন। পারিবারিক, সামাজিক অনুষ্ঠানে বাড়তি মাত্রা যোগ করে স্থানীয় শিল্পীদের গান, কবিতা, নৃত্যের পরিবেশনা। উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধ করতে এসব আয়োজনের শুরুতে শব্দযন্ত্রের পরীক্ষা চলে। শোনা যায়..হ্যালো, মাইক্রোফোন টেস্টিং ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ০।
তবে এসব নান্দনিক অনুষ্ঠানের সফল আয়োজনে যারা পর্দার আড়ালে থাকেন, কায়িক শ্রম দেন তারা আজ ভালো নেই। করোনা তাদের জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। অন্য পেশায় দক্ষতা না থাকায় আলোর ঝলকানি আর শব্দের নিপুণ সমন্বয়কারী মাইক-লাইট শ্রমিকরা গত কয়েক মাস ধরে বেকার। মুখ থুবড়ে পড়েছে মাইক-লাইটের ব্যবসাও।
দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ ধরে সাউন্ড সিস্টেমে যুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন আমিনুর রহমান। এই পেশাকে মাধ্যম করে চালাচ্ছিলেন চার সদস্যের সংসার। কিন্তু করোনা দুর্যোগ যশোর সদর উপজেলার সুজলপুর গ্রামের আমিনুরের স্বাভাবিক ছন্দের পতন ঘটিয়েছে। অন্য কোনো কাজ না জানায় যে কারো চেয়ে সমস্যা তার একটু বেশি। জীবিকা হারিয়ে এখন মহাসংকটে জীবন পার করছেন তিনি।
শুধু আমিনুর নয়, যশোর সদর উপজেলার প্রায় ৩০০ মাইক-লাইট শ্রমিক নিদারুণ কষ্টে জীবন পার করছেন। এসব শ্রমিকের নিদারুণ আর্থিক সংকটের কথা বিবেচনা করে দুই দফা সহযোগিতা করেছে যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। তবে প্রয়োজনের তুলনায় তা নিতান্তই কম।
যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুকুমার দাস বলেন, ‘যশোরে অনেক অস্বচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মী আছেন। তাদের আমরা সহযোগিতা করেছি। আমাদের সঙ্গে যেসব লাইট-মাইক শ্রমিক কাজ করেন, তাদেরও কিছু সহযোগিতা করেছিলাম। তবে আমাদেরও সামর্থ্য কম। সাধ্যের মধ্যে আমরা তাদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছি।’
যশোর মাইক-লাইট মালিক-শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নেতারা জানান, শহরে সুর ও বাণী, ফাল্গুনী, সঙ্গীতা সাউন্ড, হীরা লাইট হাউজসহ তাদের সমিতিভুক্ত ৪২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সমিতির বাইরেও বেশ কয়েকটি মাইক ও লাইটের দোকান আছে। সবমিলে শুধু যশোর সদর উপজেলায় ৫০টিরও বেশি দোকান আছে। প্রতিটি দোকানে তিনজন থেকে সাতজন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেন। তবে এখন সব বন্ধ। করোনার কারণে সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো ব্যবসা নেই। তাই কাজ বন্ধ শ্রমিকদেরও। এজন্য তাদের জীবিকা থমকে আছে গত কয়েক মাস।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাহিদ হোসেন মিরাজ বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ বন্ধ। কিন্তু আমরা অন্য কোনো কাজ শিখিনি। বাচ্চু ইলেকট্রনিকের শ্রমিক হৃদয় খান বাপ্পী বাধ্য হয়ে ইট ভাটায় কাজ করতে যান। কিন্তু সেখানে দুর্ঘটনায় পড়ে তিনি এখন হাসপাতালে। অন্য পেশার শ্রমিকদের সামান্য কাজ হলেও আমাদের কোনোই কাজ নেই। এজন্য আমরা সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিলাম। কিন্তু কোনো ধরনের সহযোগিতা পাইনি। এই পেশায় যুক্ত সব শ্রমিক মানবেতর জীবনযাপন করছেন।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুরাদ হোসেন বলেন, ‘লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এখন চরম ঝুঁকির মধ্যে আছি এই ব্যবসায় যুক্ত মালিকরা। অনেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতেন। কিন্তু এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। কাজ না থাকায় শ্রমিকরাও এখন বেকার। মালিক-শ্রমিক সবাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এজন্য যশোরের জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার মেয়রের কাছে আমরা সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছিলাম। কোনো সহযোগিতা এখনো পাইনি।’
সান নিউজ/ এআর