সৈয়দ মেহেদী হাসান, বরিশাল থেকে:
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। আশার কথা হলো, তুলনামূলকভাবে এখনো বিভাগের জেলাগুলো দেশের অন্যান্য জেলা থেকে কম সংক্রমিত।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান মনে করেন, সময়মতো পদক্ষেপ নিতে পারায় সংক্রমিতের হারে দেশের প্রথম ১০ জেলার তালিকায় বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার কোনোটিই নেই। এটি একটি সুখবর। সংক্রমণ আরও কমিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব, যদি নাগরিকরা সচেতন হন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, মানুষ মূলত করোনার সঙ্গে চলাচল করতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছেন। তাই সবকিছু বন্ধ করে রাখা হচ্ছে না। মানুষ বুঝতে পারছেন, করোনা থেকে বাঁচতে হলে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। আর সে কারণেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেক কুমার দাস বলেন, প্রত্যেকটি মৃত্যুই অনাকাঙ্খিত ও দুঃখের। কিন্তু বরিশাল বিভাগে ভয়াবহ ধরনের সংক্রমণ বা মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হয় না। করোনা আক্রান্ত-শনাক্তের ১৩২তম দিনে বিভাগের ছয় জেলা মিলে রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৯০১ জনে। মারা গেছেন সর্বমোট ৯৫ জন। সুস্থতার হারও সন্তোষজনক, যার সংখ্যা দুই হাজার ৩৮১ জন।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দেওয়া তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘন্টায় বিভাগের ছয় জেলায় করোনা আক্রান্ত একজন রোগীও মৃত্যুবরণ করেননি। তবে নতুন করে ১৩০ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে এবং সুস্থ হয়েছেন ১৪৭ জন।
তবে তার আগের ২৪ ঘন্টা (১৮ জুলাই) পর্যন্ত সর্বমোট মারা যাওয়া ৯৫ জনের মধ্যে আছেন বরিশাল জেলায় ৩৬ জন, পটুয়াখালী জেলায় ২৫ জন, ঝালকাঠি জেলায় ১২ জন, পিরোজপুর জেলায় আটজন, বরগুনা জেলায় নয়জন ও ভোলা জেলায় পাঁচজন।
বিভাগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন বরিশাল জেলায়, এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১০৬ জন, যাদের এক হাজার ৫ জন সুস্থ হয়েছেন। এরপর পটুয়াখালী জেলায় আক্রান্ত ৮৫৮ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩৭৮ জন। ভোলা জেলায় আক্রান্ত ৪৪৪ জন, সুস্থ হয়েছেন ৩০৮ জন। পিরোজপুর জেলায় আক্রান্ত ৫৫১ জন, সুস্থ হয়েছেন ২৩৫ জন। বরগুনা জেলায় আক্রান্ত ৪৯১ জন, সুস্থ হয়েছেন ২৫৯ জন। ঝালকাঠি জেলায় আক্রান্ত ৩৭৮ জন, সুস্থ হয়েছেন ১৯৬ জন।
বিভাগে সর্বপ্রথম পটুয়াখালী জেলার দশমিনা উপজেলায় আক্রান্ত শনাক্ত হয় গত ৯ মার্চ। ১০ মার্চ থেকে সংক্রমণের তালিকা খোলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর। সেইদিন থেকে আজ ১৩২দিনে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ বিভাগের ছয় জেলায় মোট ২৬ হাজার ২৩ জনকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। এর মধ্যে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় ২১ হাজার ৬১৪ জনকে। ইতোমধ্যে ১৮ হাজার ৪৩৫ জনকে হোম কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভাগের বিভিন্ন জেলায় হাসপাতালে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয় চার হাজার ৪০৯ জনকে। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৬০০ জনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
বিভাগের সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭৫ জন। তাদের মধ্যে এক হাজার ২৯৬ জনকে ছাড়পত্রও দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের আইসোলেশন ও করোনা ওয়ার্ডে মোট ১৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৪ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন। বাকি ৮৫ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হােসেন।
সান নিউজ/ এআর