এহসানুল হক (ময়মনসিংহ) : 'তেলের দাম যে বাড়া বাড়ছে,আয়ের লগে(সাথে) ব্যয়ের কোন মিল নেই। পাক্কার টেহা পাক্কাতে তাহে (সড়কের টাকা সড়কেই চলে যায় তেল খরচে)। এভাবে চলতে থাকলে মানুষের চুরি-ছিনতাই করা ছাড়া উপায় থাকব না।' এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন মো. দুলাল মিয়া নামের এক মোটরসাইকেল রাইডার।
আরও পড়ুন: সরকারি কর্মচারী গ্রেফতারে পূর্বানুমতির বিধান বাতিল
কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন মো. দুলাল মিয়া (৪৫)। এক সময় কৃষি কাজ করে পরিবার-সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি। একজনের পরামর্শে একটি মোটরসাইকেল কিনে শুরু করেন রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ। ১০ বছর ধরে টুকটাক কৃষি কাজের সাথে মোটরসাইকেলে ভাড়া মেরে ভালোই চলছিল দুলালের সংসার। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়েছেন দুলাল। আয়ের - সাথে ব্যয়ের ফারাক হয়ে দাড়িয়েছে আকাশ সমান।
দুলালের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের দামদী গ্রামে। স্ত্রী,৪ মেয়ে ও ২ ছেলের সংসার তার। সারা দিন রাইড শেয়ারিং করে যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চলে না। এর মধ্যেই জ্বালানির দাম হঠাৎ করে লিটারে ৪৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে চিন্তার ভাঁজ পড়ল তার কপালে। আগের অভাবের সঙ্গে নতুন এই টাকার যোগফল কীভাবে মেলাবেন, সেটা নিয়েই ভাবছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আগে দৈনিক ভাড়া মেরে ৫০০-৬০০ টাকা আয় করতে পারতেন। এখন গাড়ির তেল খরচ উঠিয়ে ২০০ টাকা আয় করতেও বেগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। আগে ১০০ টাকার তেলে যে পথ যাওয়া যেত, এখন ১৫০ টাকার তেলেও তা সম্ভব নয়। এ ছাড়া বেশি ভাড়া চাইলে যাত্রীরাও উঠতে চান না।
রহমত উল্লাহ নামের আরেক মোটরসাইকেল চালক বলেন, আমরা এখন খুব দুরবস্থায় আছি। আগে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার তেলে সারা দিন মোটরসাইকেল চালাইতে পারতাম। সব খরচ বাদ দিয়াও আমাদের গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা থাকতো কিন্তু এখন সেই জায়গায় তেলই লাগব প্রায় ৫০০-৬০০ টাকার। এর বাইরে অন্যান্য খরচ তো আছেই। তাইলে আমরা এখন বাঁচবো ক্যামনে। বেশি ভাড়া চাইলে যাত্রীরাও রাগ করে, উঠবার চায় না। আমরা যাইয়াম কই।’
দুলাল ও রহমত উল্লাহর মতো একই চিন্তা অন্য মোটরসাইকেল চালকদের। বিশেষ করে যাঁরা রাইড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন, তাঁদের। হঠাৎ করেই লিটারপ্রতি জ্বালানি খরচ ৪৬ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা। পরিবার, সংসার বা অন্যান্য খরচের সঙ্গে নতুন করে এই টাকার ঘাটতি কীভাবে মেটাবেন, সেটাই ভাবছেন তাঁরা। তা ছাড়া বেশি ভাড়ার শঙ্কায় এরই মধ্যে কমেছে যাত্রী।
আরও পড়ুন: ওয়াসা এমডির ব্যাংক হিসাব তলব
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার পৌর এলাকার হাসপাতাল রোডে গিয়ে দেখা হয় দুলাল ও রহমত উল্লাহর সঙ্গে। অনেক মোটরসাইকেলের চালকের সঙ্গে তাঁরাও বসেছিলেন সেখানে। এর মধ্যেই কিছুটা সময়ের জন্য কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কের পাশে বসে আছেন মোটরসাইকেলের চালকেরা। অন্য দিনের মতো তাঁদের মধ্যে কাজের প্রতি উচ্ছ্বাস বা কর্মোদ্যম নেই সেভাবে। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন তেলের চড়া দাম নিয়ে। কেউ কেউ নিজেরাই ঝাড়ছিলেন ক্ষোভ।
সান নিউজ/এসআই