ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : দশম শ্রেনীতে পড়া অবস্থায় বাবা হারিয়েছেন রিফাত হাসান রিপন (২২)। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটির মৃত্যুর পর পরিবারে নেমে আসে দুর্দিন। তিন সদস্যের পরিবারের দায়িত্ব গিয়ে পড়ে তার কাঁধে। বসবাসরত জমিটুকু তাদের সম্বল।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব নয়
শত কষ্টের পরেও দারিদ্রকে পরাজিত করার স্বপ্ন নিয়ে অজপাড়াগাঁও থেকে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। পরিবারের ইচ্ছা ছিলো একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই নেমে আসে কালো অধ্যায়। হঠাৎ জ্বর, বমি আর মাথাব্যথা দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানায় রিপনের দুটি কিডনি অকেজো।
রিফাত হাসান রিপন ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের পকম্বা এলাকার বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি তাঁর প্রবল আগ্রহ। সেই আগ্রহ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগে। বর্তমানে সেই কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
আরও পড়ুন : মিয়ানমারের সাংগাইয়ে ৩০ সেনা নিহত
পারিবারিক সূত্র জানা গেছে, দুই বছর আগে হঠাৎ জ্বর, বমি আর মাথাব্যথা দেখা দেয় রিপনের। পরে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান যে রিপনের কিডনি দুইটি আর কাজ করছে না। একথা শুনে তার পরিবারের লোকজন শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে তার চিকিৎসা শুরু করেন।
দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহীতে চিকিৎসা শেষে ঢাকা সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রিপনকে। সেখানকার চিকিৎসক অধ্যাপক কামরুল ইসলাম রিপনকে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। বর্তমানে রিপনকে সপ্তাহে দুই দিন ডায়ালাইসিস করাতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস না করালে শুরু হয় শ্বাসকষ্ট।
আরও পড়ুন : সয়াবিন তেল লিটারে বাড়ল ৭ টাকা
মুঠোফোনে রাতে অসুস্থ রিফাত হাসান রিপন জানান, বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবো। সেই স্বপ্ন নিয়েই পড়াশোনা করছিলাম। নিজেও স্বপ্ন দেখেছিলাম উচ্চ শিক্ষিত হয়ে দেশের জন্য কিছু একটা করবো। এখন সপ্তাহে দুদিন হাসপাতালে না গেলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা হয়। তবুও স্বপ্ন দেখি বেঁচে থাকার।
রিপনের মা রিতা বেগম জানান, ৮ বছর আগে স্বামী হারিয়েছি। অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই। যা কিছু ছিল সব কিছু বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসায় খরচ করেছি।
ডাক্তার এখন দ্রুত ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে বলেছেন। কিন্তু ভারতে গিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে কমপক্ষে ১৮ লাখ টাকাপ্রয়োজন। যা আমার পক্ষে সম্ভব না। আত্মীয় স্বজন, রিফাতের বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন।
আরও পড়ুন : দেশে এলো ফাইজারের ১ কোটি টিকা
কিন্তু এই টাকা তাঁর চিকিৎসার জন্য খুবই নগণ্য। ছেলেকে বাঁচাতে সবার কাছ সাহায্য চাচ্ছি। আমার সন্তানকে বাঁচাতে আপনারা শুধু চিকিৎসার খরচটা দেন। আমি আমার কিডনি দেব!
এ বিষয়ে লেহেম্বা ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, রিপনের দুইটি কিডনিই নষ্ট। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে অনেক টাকার প্রয়োজন যা ওই পরিবারের পক্ষে ব্যয় করা সম্ভব না। যদি সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসে তবেই রিপনকে বাঁচানো সম্ভব।
সান নিউজ/এইচএন