এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অধিগ্রহণ জটিলতায় ৪৩ কি.মি. সড়কের উন্নয়ন আটকে আছে পাঁচ কিলোমিটারে। ওই ৫ কিলোমিটার এলাকায় সড়কের কাজ করতে না পারায় উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না জনগণ।
আরও পড়ুন: সেই শিশুকে ৫ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ
ভূমি অধিগ্রহণ করার পর সড়ক উন্নয়নকাজ শুরুর বিধান থাকলেও স্থানীয়দের বুঝিয়ে ৩৮ কিলোমিটার এলাকার কাজ করতে পেরেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। বাকি ৫ কিলোমিটার এলাকার মানুষ অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া নিজের ভিটেজমি ছাড়তে চাইছেন না।
এ কারণে প্রকল্পের সময় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যাচ্ছে না নেত্রকোনা থেকে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের। একই পরিস্থিতি আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কের ক্ষেত্রেও। ১৫ কিলোমিটার সড়কটির আড়াই কিলোমিটার অংশে দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ অধিগ্রহণ জটিলতায়। এতে দুই সড়কে চলাচলকারী লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: উচ্ছ্বসিত পূজা চেরি
নেত্রকোনা জেলার বিশিউড়া থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত সাড়ে ২৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালে। ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সড়ক নির্মাণের কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বিশিউড়া থেকে গৌরীপুর পর্যন্ত নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা গেলেও আটকে যায় ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায়।
এক বছর ধরে সড়কটির নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় আড়াই কিলোমিটার অংশে ভূমি অধিগ্রহণের টাকা হাতে না পেয়ে ভিটেজমি ছাড়তে রাজি না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ আর কাজ করতে পারেনি।
আরও পড়ুন: চীনের সঙ্গে ৪ সমঝোতা স্মারক সই
সড়কটির কাজ শেষ হলে নেত্রকোনা থেকে ঢাকাগামী যানবাহন এই সড়কটি ব্যবহার করে কানুরামপুর হয়ে ত্রিশাল দিয়ে যেতে পারত। এতে ময়মনসিংহ শহর হয়ে যওয়ার ভোগান্তি পোহাতে হতো না। চরনিখলা এলাকার রাজমিস্ত্রি আবদুস সামাদের ভিটেতে সাড়ে ৪ শতক জমির ৩ শতক অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। অধিগ্রহণের টাকা না পেলে নতুন জায়গায় গিয়ে বসতি গড়বেন সেই ক্ষমতা নেই তার। সে কারণে তিনি জমি ছাড়তে রাজি হননি।
তিনি বলেন, সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে; কিন্তু অন্যত্র ভিটে গড়ার মতো ব্যবস্থা থাকলে আগেই করতেন।
আরও পড়ুন: ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়
শিমরাইল গ্রামের বৃদ্ধ সাইদুল ইসলাম জানান, তার ও তার বড় ভাইয়ের ১১ শতক জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। তার ঘর ভেঙে দিলে খোলা আকাশের নিচে থাকতে হবে। অধিগ্রহণের টাকা পেলে নতুন ঘর করতে পারবেন।
নেত্রকোনার সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী তারিফুল হক খান সড়কটি তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ডিপিপি পাঠানো হয়েছে। অধিগ্রহণের কাজ শেষ হলেই রাস্তা দ্রুত করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন: রিকশা গ্যারেজে বিস্ফোরণ, নিহত ৩
আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কে থেমে আছে কাজ:
আঠারবাড়ী থেকে ঈশ্বরগঞ্জ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার সড়কের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। সে বছর ৩০ জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। ১১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার রাস্তাটির কাজ ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকায় আড়াই কিলোমিটার অংশ অধিগ্রহণ না করায় আটকে আছে। পৌর এলাকায় সড়কের দুই পাশে বাসা-দোকানপাটের মালিকদের কেউ অধিগ্রহণের টাকা ছাড়া জমি ছাড়তে চাইছেন না। এর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সড়কের কাজ বন্ধ থাকায় ঈশ্বরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে যাতায়াতেও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি কিশোরগঞ্জ সওজের অধীনে নির্মিত হচ্ছে।
সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী শেখ মোজাম্মেল হক বলেন, এরই মধ্যে প্রকল্পের ৫৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাজের সময় শেষ হয়ে গেলে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হবে।
আরও পড়ুন: ফের চলন্ত বাসে গণধর্ষণ
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার মো. কবীর হোসেন বলেন, আঠারবাড়ী-ঈশ্বরগঞ্জ সড়কে সরকারি খাদ্যগুদাম ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের ভবন ভাঙতে হবে। ভবনগুলো অক্ষুণ্ণ রেখে সওজকে নতুন করে প্রস্তাবনা দিতে বলা হয়েছে। নতুন প্রস্তাবনা এলেই অধিগ্রহণের বিষয়ে কাজ শুরু হবে।
ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শেগুফতা মেহনাজ বলেন, কিছু জটিলতা ছিল। এসব দূর করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ বিষয়ে ৭ ধারার নোটিশ পৌঁছে যাবে। ৩ মাসের মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা করছেন।
সান নিউজ/কেএমএল