কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
বর্ষণ আর উজানের ঢলে ফুঁসে উঠছে ব্রহ্মপুত্র আর দুধকুমার। ফলে এ অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার ৯ উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের সাড়ে চারশ’ গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যায় বিপর্যস্ত নদ-নদী অববাহিকার লাখো মানুষ রয়েছেন চরম দুর্ভোগে। বিশুদ্ধ খাবার পানির পাশাপাশি রান্নার জায়গার সংকটে শুকনো খাবারের জন্য হাহাকার করছেন বানভাসিরা।
আগামী ২৪ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড।
জেলা প্রশাসন বলছে, বন্যা মোকাবিলায় পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্যা কবলিতদের আশ্রয়ের জন্য ফ্লাড শেল্টারসহ (বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র) ৪৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের সহায়তায় ১৭০ মেট্রিকটন চাল, চার লাখ টাকা জিআর ক্যাশ, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং শিশু ও গোখাদ্যের জন্য চার লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বণ্টন শুরু হয়েছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানিসহ যেকোনও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বন্যার পানি বেড়ে জেলার ৯ উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার অববাহিকার চরাঞ্চলের প্রায় সবকটি ইউনিয়ন পানিতে প্লাবিত। মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লবেরখাস ইউনিয়নে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশু এবং বুধবার (১৫ জুলাই) চিলমারী উপজেলায় এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে রাজীবপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানি প্রবেশ করেছে। প্লাবিত হয়েছে ওই উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন।
রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নবীরুল ইসলাম জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে বন্যার পানি প্রবেশ করলেও তারা বন্যা মোকাবিলায় ত্রাণ কার্যক্রম গতিশীল রেখেছেন। বন্যাকবলিতদের জন্য উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে ১৬ মেট্রিকটন চাল ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
ইউএনও বলেন, ‘বন্যার পানিতে রৌমারী-রাজীবপুর-ঢাকা মহাসড়ক ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়াও জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ সীমান্তের কাছে কদমতলি বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ওই পথে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।’
বন্যা কবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুকনো জায়গার অভাবে রান্নার বিড়ম্বনায় পড়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলো। পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করছে। বয়োবৃদ্ধ ও শিশুসহ গবাদি পশু নিয়ে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন বানভাসিরা। অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিলেও বেশিরভাগ পরিবার নিজ বাড়িতেই পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। কেউবা স্ত্রী সন্তান নিয়ে নৌকায় সংসার পেতেছেন। স্যানিটেশন ব্যবস্থার অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও কিশোরীরা। বানভাসি যাদের নৌকা রয়েছে তারা নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনো জায়গার অভাবে অনেকের গবাদি পশু পানিতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানিতে প্লাবিত হয়েছে উলিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশ’ হেক্টর বীজতলা। এ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়ন চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসিদের শুকনো খাবারের পাশাপাশি অন্যান্য সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ধরলার পানিতে সদর উপজেলায় হলোখানা, ভেলাকোপা ও পাঁচগাছী ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের ধরলা তীরবর্তী বেশিরভাগ পরিবার এখনও পানিবন্দি রয়েছে। পানিবন্দি রয়েছে নাগেশ্বরী, রাজারহাট ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নের কয়েক হাজার পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, বুধবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ধরলা ও তিস্তার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ধরলা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়ে সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টা ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে এর অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। তবে ধরলা ও তিস্তার পানি কমে এ দুটি নদী অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকবে।
সান নিউজ/ বি.এম.