আমিরুল হক, নীলফামারী: পূর্ব শত্রুতার জের ধরে মোটরসাইকেলসহ পথরোধ করে টাকা ও মোবাইল ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে জরুরি সেবায় পুলিশকে অভিযোগ দেয়ায় দলবদ্ধভাবে বাড়িতে হামলা চালিয়ে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে রশি দিয়ে খুটির সাথে বেঁধে রেখে মারপিটের অভিযোগ মিলেছে। বন্দিদশা থেকে পুলিশ উদ্ধার করলেও জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ভুক্তভোগী পরিবার।
আরও পড়ুন: আয়মান আল-জাওয়াহিরি নিহত
এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের খোর্দ্দ বোতলাগাড়ী চাঁন্দিয়ারপাড় এলাকায়। সোমবার (১ আগস্ট) সকাল ৮টায়। এ ঘটনায় আহত ১ বৃদ্ধাসহ ৩ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অভিযোগ তুলে নিতে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে অসহায় পরিবারটিকে।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চান্দিয়ার পাড় এলাকার মো. নুর ইসলামের ছেলে আনসার ভিডিপি সদস্য মো. মোজাহারুল ইসলাম (৩৮) বলেন, সকাল ৮টায় স্ত্রী বিউটি বেগমকে উত্তরা ইপিজেড কর্মস্থলে রেখে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিবেশী কালা মামুদের ছেলে মো. খাতিবুল ইসলাম (৪০) তার মুদি দোকানের সামনে পাকা রাস্তায় আমার পথরোধ করেন।
আরও পড়ুন: সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নামছে টাইগাররা
প্রতিবাদ করলে খাতিবুলের নির্দেশে মো. ইনুসের ছেলে মো. জীবন (২৮) ও মোজাফ্ফর (৩২) আমাকে টানা হেঁচড়া শুরু করে। মোটরসাইকেল থেকে না নামায় তারা এলোপাথাড়ি কিল ঘুসি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম করে। এরই মাঝে খাতিবুল হত্যার উদ্দেশ্যে আমার গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধের চেষ্টা করে। ওই সময় সে ব্যর্থ হয়ে প্যান্টের পকেটে থাকা ১ লাখ টাকা ও একটি এন্ড্রয়েট সিম্ফনি মোবাইল ফোন (যার দাম ৭ হাজার টাকা) জোরপূর্বক বের করে নেয়। এমন পরিস্থিতিতে আমি প্রাণ রক্ষায় কৌশলে পালিয়ে বাড়িতে এসে অন্য একটি মোবাইলে ৯৯৯ জরুরিরী সেবায় পুলিশকে ফোন করি।
থানায় খবর দেয়ার বিষয় বুঝতে পেরে ওই তিনজনসহ অন্য ১১ আসামি দলবদ্ধ হয়ে আমার বসত বাড়িতে ঢুকে ৯৯৯ নম্বরে কেন ফোন করেছি মর্মে গালিগালাজ করে টেনে হিচড়ে আমাকে খাতিবুলের বাড়িতে নিতে চায়। এতে বাবা মো. নুর ইসলাম (৭০), মা মোছা. মর্জিনা বেগম (৬৫), মেয়ে মোস্তারিনা (১৬) ও মারিয়া জান্নাত মিতু (১০) বাধা দিলে সামসুলের ছেলে মো. কালাম (২৮) তার হাতের লোহার রড দিয়ে আমার মায়ের কোমড়ে আঘাত করলে তিনি প্রচণ্ড জখম হন। এ সময় ব্যাথায় চিৎকার করায় শাহজাহান (৩৫) নামে আরেক যুবক মায়ের গলা চেপে ধরে। একই সময়ে খাতিবুল তার হাতের ধারালো অস্ত্র দিয়ে বাবার মাথায় আঘাত করলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তার ডান হাতের আঙ্গুলে লেগে গুরুতরভাবে কেটে গেছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘায়ু কামনা
মৃত বাইসালু মামুদের ছেলে মো. সামসুল (৪০), মৃত মোস্তফার ছেলে মো. এমদাদুল হক (৫০), মৃত ওবায়দুলের ছেলে মো. সাগর (২৫), মো. অকিউলের ছেলে মো. আরিফুল (১৮), মো. দুলালের ছেলে মো. কালঠু (৩০) বড় মেয়ে মোস্তারিনা এবং মৃত বুদারু মামুদের ছেলে মো. আবুল হোসেন (৫৫), খাতিবুলের স্ত্রী মোছা. মুন্নি বেগম (৩৫), এমদাদুল হকের স্ত্রী মোছা. সালেহা বেগম (৪০) ও মৃত শফিকুল ইসলামের স্ত্রী মোছা. আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫) ছোট মেয়ে মিতুকে ধরে মারপিট করে।
এরপর উপরোক্ত আসামিরা সকলে মিলে আমাকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে ধরে নিয়ে গিয়ে খাতিবুলের বাড়িতে বারান্দার কনক্রিটের পিলারের (খুটি) সাথে রশি দিয়ে বেঁধে রেখে বাঁশের লাঠি দ্বারা মারধর করে। আমার চিৎকারে আশেপাশের লোকজনসহ সাক্ষী মৃত হেমন্ত চন্দ্র সরকারের ছেলে দিজেন চন্দ্র সরকার (৬০), মৃত আফসার আলীর ছেলে মো. বুদারু (২৫), লালু মামুদের ছেলে মো. আহিদুল (৩৫) ও মৃত সুধীরের ছেলে সুরেশ (৪০) এগিয়ে আসে এবং দীর্ঘ ২ ঘন্টা পর পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে আমাকেসহ আহত বাবা ও মাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।
আরও পড়ুন: ধানখেতে পড়ে ছিল দিন মজুরের লাশ
মোজাহারুল বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আসামিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা সবাই পারিবারিকভাবে একই বংশভুত এবং খাতিবুলের অপকর্মের দোসর। মূলত বিগত ইউপি নির্বাচনে ওয়ার্ড মেম্বার রবিউলের অপকর্মের কারণে তার বিপক্ষে আমি ও আমার বাবা অবস্থান করায় শত্রুতা পোষণ করে তারা। তাই বিভিন্ন অজুহাতে তারা আমাদেরকে পর্যুদস্ত ও হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বেআইনি এই ঘটনা ঘটিয়েছে খাতিবুল গংরা। এখন অভিযোগ তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। তাই আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে আছি।
এ ব্যাপারে সত্যতা যাচাইয়ে চান্দিয়ার পাড় খাতিবুলের বাড়িতে গেলে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী মুন্নি বেগমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সুরেশের দোকানের ব্রেঞ্চে পায়খানা রাখার ঘটনা নিয়ে আমার স্বামীকে অভিযুক্ত করে মোজাহারুল। নিজে না দেখে অহেতুক মিথ্যের আশ্রয় নেয়ায় স্থানীয়ভাবে সালিশ হয়। তাতে সুরেশ অস্বীকার করে বলে যে খাতিবুলের নাম কেউ বলেনি। এতে কোনরকম মীমাংসা ছাড়াই মিটিং শেষ হয় এবং ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার সেখানে সালিস ছিল। আমাদের পক্ষে সবাই উপস্থিত হলেও মোজাহারুল কৌশলে উপস্থিত না হয়ে সময় নেয়।
আরও পড়ুন: ২০ টাকার নাপা ৩৫ টাকায় বিক্রি!
এরই মাঝে আজ সোমবার (১ আগস্ট) সকাল ৬ টায় আমাদের মুদি দোকান খোলামাত্রই মোজাহারুল এসে দোকানের সামনে বসার মাচান ভেঙে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। এতে প্রতিবাদ করায় মোজাহারুলের পরিবারের লোকজন একজোট হয়ে আমার ওপর চড়াও হয়ে আমার কাপড় চোপড় ছিড়ে ফেলে এবং মারধর করে। পরে আমার স্বামী ঘটনা শুনে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে মোজাহারুলকে ধরে এনে বাড়িতে বেঁধে রাখে।
খবর দিলে পুলিশ এসে মোজাহারুলকে ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে আদালতে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছে। আমরা তাই করবো। কিন্তু জানতে পারলাম ঘটনাকে পাল্টে দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ এনে মোজাহারুলই লিখিত দিয়েছে থানায়। যা মেনে নেয়ার মত নয়। মোজাহারুল কতটা ঘৃন্য মামলাবাজ তা এলাকার সবাই জানে। ইতোপূর্বে সে বিনা কারণে একজন বৃদ্ধাকে হাত পা ধরে আলগা করে উপরে তুলে পাকা রাস্তার উপর আছাড় মেরে ফেলে দিয়ে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে দিয়েছে। তাছাড়াও বিভিন্ন জনের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে। এবার সব অন্যায়ের বিচার হবে।
সান নিউজ/কেএমএল