জহিরুল হক মিলন, ফেনী: রোদের তীব্রতা সাথে রয়েছে গরম, চলছে লোডশেডিং। ফেনীতে তীব্র লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। জাতীয় পাওয়ার গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় দুই ঘন্টার স্থলে লোডশেডিং হচ্ছে পাঁচ থেকে সাত ঘন্টা। স্থানভেদে কোন কোন জায়গায় বিদ্যুৎ নেই ৮ ১০ ঘন্টা। এ সুযোগে অধিক মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছে ইলেকট্রিক চার্জার লাইট ও ফ্যানসহ আইপিএসের দাম।
আরও পড়ুন: আবারও মা হতে যাচ্ছেন ঐশ্বরিয়া!
প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত বার লোডশেডিং এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ ফিরে না আসায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে। সামনে এসএসসি পরীক্ষা দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না আসায় শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায়ও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অতিরিক্ত গরম ও রাতের অন্ধকার থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ ঝুঁকছেন চার্জার লাইট ও ফ্যান সহ আইপিএসের দিকে। আর এ সুযোগে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন পণ্যের দাম। এমন অবস্থা বিরাজ করছে জেলা জুড়ে।
এ বিষয়ে ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, চাহিদার তুলনায় জাতীয় গ্রিড থেকে বরাদ্ধ পাওয়া যাচ্ছে অর্ধেকের চেয়েও কম যেখানে ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন সেখানে গ্রিড থেকে পাচ্ছেন ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ফলে বাণিজ্যিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অফিস, স্থাপনা কম হচ্ছে লোডশেডিং এছাড়া অন্যত্র বিদ্যুৎ সরবরাহে একটু বিঘ্ন ঘটছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: দাম বাড়ালেন নয়নতারা
ধনী গরিব কমবেশি সবাই ঘরে এক দুটি চার্জার লাইট এবং ফ্যান কিনছেন। বিভিন্ন আকার ও বৈশিষ্ট্যের এসব ফ্যান বিক্রি হচ্ছে ২৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকায়। ফিয়াট, ডিফেন্ডার, ওসাকা, নোভা, কেনেডি, সানকা, সিবেক, কোনিওন, ওয়ালটনসহ নানা ব্র্যান্ডের ফ্যান বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আর লাইট বিক্রি হচ্ছে ৫শ থেকে দেড় হাজার টাকা দামে পর্যন্ত। বিক্রেতাদের দাবি, একবার চার্জ দিলে এক নাগাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা চলবে এইসব পণ্য। শহরের পাঁচগাছিয়া শড়কের এসি বিক্রেতা নুরুল আবসার বলেন, শীতে এসি বেচাকেনা তেমন একটা না হলেও এখন ভালই হচ্ছে। এমনিতেই গরমে বেচাবিক্রি ভালই হয়।
এতে অপেক্ষাকৃত ধনীরা সমানে ছুটছেন এসির দোকানে। এসি বিক্রি হয় ওজনের হিসাবে, ব্র্যান্ডভেদে দামও ভিন্ন ভিন্ন হয়। কত ওজনের এসি লাগাতে হবে তা নির্ভর করে ঘরে বা রুমের ক্ষেত্রফল ও আয়তনের ওপর। এক টন এসির দাম পড়বে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দেড় টনের এসি, যার দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত। দুই টনের এসির দাম পড়বে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। বাজারে প্যানাসোনিক, জেনারেল, ওয়ালটন, এলজি, র্যাগস, স্যামসাং নানা নামী ব্র্যান্ডের এসি বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আরও পড়ুন: আম্মুর জন্য পাত্র খুঁজছি
শহরের কলেজ রোডের ইলেকট্রিক ব্যবসায়ী শহিদুল জানান, গত কিছুদিন যাবৎ অস্থির ইলেকট্রিক পণ্যের দাম। আগে চার্জার সিস্টেম ইলেকট্রিক পাখা কেনা পড়তো ৩৫শ টাকা সেটি বেড়ে এখন ৪২শ টাকা। তাই ক্রেতাদের থেকেও বাড়তি দাম নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
সোহেল রানা নামে আরেক ক্রেতা বলেন, দোকানে গেলে পণ্য সীমিত আছে এমন অজুহাত দেখিয়ে দাম হাকাচ্ছেন সে দামেই তারা পণ্য কিনছেন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ৭.৫৬ শতাংশ
সদর উপজেলার বাসিন্দা রহিম উল্লাহ বলেন, দিনের বেলা বিদ্যুৎ কিছুটা থাকলেও সন্ধ্যার পর দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না আসায় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। তীব্র গরমে আমার বৃদ্ধ বাবা মা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে শহরের তুলনায় গ্রামে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেক বেশি। জেলার ছয় উপজেলার বেশকয়েক উপজেলায় লোডশেডিংয়ের যন্ত্রনায় ফুঁসে উঠছে সাধারণ জনগণ, যে কোন সময় তারা পল্লী বিদ্যুতের অফিস ঘেরাও করতে পারে এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। লাগামহীন ইলেকট্রিক দোকানীরা। ফলে নিরুপায় হয়ে পণ্যের দাম।
ছাগলনাইয়া উপজেলার মজিবুল হক নামে এক বাসিন্দা বলেন, বিদ্যুৎ ১০ ১২ ঘন্টা থাকছে না। যেখানে শিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে লোডশেডিং হওয়ার কথা সেখানে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। লোডশেডিং উপজেলা সদরের চাইতে বেশি ভয়াবহ অবস্থা গ্রামগুলোতে। সেখানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম পর্যায় পৌঁছেছে।
আরও পড়ুন: পরীমনির জন্য খাবার নিয়ে এলেন আরেক ‘মা’
বিদ্যুৎ বিভাগের দাবি, চাহিদার তুলনায় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ কম পাচ্ছেন।
দাগনভূঞা উপজেলার বাসিন্দা বেলাল হোসেন বলেন, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। গভীর রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে প্রচন্ড গরমের যন্ত্রণায় প্রতিটি বাড়িতে শোনা যায় শিশুদের আর্তচিৎকার। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা রয়েছে চরম বিপাকে। ঘন ঘন এমন লোডশেডিংয়ের কারণে কম্পিউটার, ফ্রিজ,নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
সান নিউজ/কেএমএল