এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): শৈল্পিক পাখি বাবুই ও তার বাসা নিয়ে যুগে যুগে কবি- শিল্পীরা তাদের কবিতা ও গানে গানে মনের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। রজনীকান্ত সেন 'স্বাধীনতার সুখ' কবিতার চরণ_ বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই- “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই; এবং কণ্ঠশিল্পী এন্ড্রু কিশোর ও কনকচাঁপার কন্ঠে গাওয়া' প্রেম হইলোরে বাবুই পাখির বাসা' গানটির কথা মনে পড়ে যাবে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে তালগাছে বানানো বাবুই পাখির বাসা দেখে। একসময় এ কবিতা ও গান সকলের মুখে মুখে ছিল। কালের বিবর্তনে এ কবিতা ও গানের মতোই শৈল্পিক বাসার কারিগর বাবুই পাখি ও তার সুদর্শন বাসা আজ বিলুপ্তির পথে।
আরও পড়ুন: রণবীর-শ্রদ্ধার শুটিংয়ে আগুন, নিহত ১
দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখির বাসা। এসব বাসা শুধু শৈল্পিক নিদর্শনই ছিল না, মানুষের মনে চিন্তার খোরাক জোগাত এবং আত্মনির্ভরশীল হতে উৎসাহ দিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে ও পরিবেশে বিপর্যয়ের কারণে পাখিটি আমরা হারাতে বসেছি। একসময় গ্রাম-গঞ্জের নারকেল, খেজুর, রেইনট্রি, আখ খেতে এবং বিশেষ করে তাল গাছে দল বেঁধে বাসা বুনে থাকতো এ পাখি। এরা সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু ও রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। প্রকৃতি থেকে তাল আর খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়ায় বাবুই পাখিও হারিয়ে যেতে বসেছে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় বসবাস উপযোগী পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি ও তার বাসা। এক যুগ আগেও উপজেলার সব জায়গায় চোখে পড়ত এ পাখি ও তার বাসা। কিন্তু এখন সারিবদ্ধ তালগাছের পাতায় ঝুলতে দেখা যায় না তাদের শৈল্পিক বাসা। কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় না গ্রামবাংলার জনপদ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, কীটনাশকের ব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে।
জানা যায়, নিপুণ শিল্পকর্মে দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত বাসা তৈরির জন্য বাবুই পাখি বিখ্যাত। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। নলখাগড়া ও হোগলা পাতা দিয়ে বাবুই বাসা বুনে থাকে। সেই বাসা যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি মজবুত। শক্ত বুননের এই বাসা সহজে ছেঁড়া যায় না। অনেকে বাবুই পাখিকে তাঁতি পাখিও বলেন।
আরও পড়ুন: র্যাব ফোর্সের সদস্যরা দেশের রিয়েল হিরো
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ আনন্দ মোহন কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মোফাক্কারুল ইসলাম সোহেল বলেন, ইট ভাটার দূষণ, মোবাইল টাওয়ারের তেজস্ক্রিয়তা ও ফসলের খেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে খাদ্যাভ্যাস নষ্ট হয়ে পড়ে। এতে বাবুই পাখি প্রতিকূল পরিবেশ এবং খাদ্য সংকটে পড়ে বিলুপ্তির পথে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সাবেক কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মোঃ সায়েম মুঠোফোনে বলেন, গ্রামাঞ্চলে বাবুই পাখিসহ বিভিন্ন প্রাণী খাদ্য সংকট ও অতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহারের কারণে আজ বিলুপ্তির পথে। সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতাই পারে এদের রক্ষা করতে।
প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা, প্রকৃতির বাস্তুসংস্থান (ইকো সিস্টেম) ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় ও পরিবেশ দূষণের ফলে বাবুইসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি আজ বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে।
সান নিউজ/এনকে