নোয়াখালী প্রতিনিধি: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে হাজেরা খাতুন (৩৫) নামে এক গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শ্বশুর বাড়ির লোকজন এটিকে স্ট্রোক অথবা বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু দাবি করলেও হাজেরার স্বজনরা বলছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
আরও পড়ুন: নিজেকে জ্বলন্ত কবরে দেখতাম
মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল ছালা মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। পরে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
নিহত হাজেরা খাতুন উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ৮নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুল ছালা মিয়ার বাড়ির মাহফুজুল হক মানিকের স্ত্রী এবং কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়রে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সোনাদিয়া গ্রামের মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের মেয়ে।
আরও পড়ুন: ‘বউয়ের সঙ্গে ঝগড়ার খবর চাকরিতে জানাই না’
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিহতের স্বামী স্থানীয় নুরানী ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার দারোয়ান। গত ১৩-১৪ বছর পূর্বে তারা দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের একমাত্র ছেলে হেফজখানায় পড়ে। ঈদের পরে সে মাদ্রাসায় চলে যায়। গত শনিবার বিকেলে নিহেতর স্বামী মাদ্রাসায় ডিউটি করার জন্য চলে যায়। এরপর থেকে গৃহবধূ হাজেরা খাতুন ঘরে একা ছিল। সোমবার সকাল ১০টার দিকে নিহতের স্বামী মুঠোফোনে খবর পান তার স্ত্রী মারা গেছে। এমন খবরে তিনি তার বসতঘরের সামনে এসে দেখেন লোকজন জড়ো হয়ে আছে। তার স্ত্রী বসতঘরের দরজার উপর মৃত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কেউ কেউ বলাবলি করে তার স্ত্রী স্ট্রোক অথবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে। নিহতের স্বামী মানিক তার পাশের ঘরের লোকজনকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায় সকাল ৯টার দিকে তাকে বসতঘরের দরজার ওপর পড়ে থাকতে দেখেছে।
নিহতের ভাই ইসমাইল ও ইব্রাহিম অভিযোগ করে বলেন, শ্বশুর বাড়ির লোকজন তার বোনের লাশ তড়িঘড়ি করে দাফনের চেষ্টা করে। তাদের বাধার মুখে দাফন করতে পারেনি। এরপর তারা মরদেহ তার স্বামীর বাড়ি থেকে তাদের কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম সোনাদিয়া গ্রামে নিয়ে যান। সেখানে তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন দেখে স্থানীয় চেয়ারম্যান বিষয়টি কোম্পানীগঞ্জ থানাকে অবহিত করে।
আরও পড়ুন: আন্দোলন স্থগিত করলেন রনি
অভিযোগ করে তারা দুই ভাই আরও বলেন, নিহত হাজেরার দেবর মিলন, তার স্ত্রী লাকী আক্তার ও তার ছেলে তারেক আমার বোনকে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও তারা দাবি করেন। এর আগেও একাধিকবার তারা আমাদের বোনকে মারধর করে। সর্বশেষ ঈদুল আজহার আগেও তাদের বোনকে মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ করেন।
নিহতের স্বামী মাহফুজুল হক মানিক অভিযোগ করে বলেন, এর আগে আমার সাথে একাধিকবার আমার ছোট ভাই মিলনের সঙ্গে জায়গা সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মারামারি হয়। এরপর সে আমার স্ত্রীকে হুমকি দেয় এখানে তাকে থাকতে দেবে না।
আরও পড়ুন: পাঁচ মাসে হাফেজ ১০ বছরের তাসিন
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার নিহতের দেবর মিলনের ফোনে কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কোম্পানীগঞ্জ থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম রাজা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।
এসআই রাজা আরও জানায়, মঙ্গলবার সকালে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সান নিউজ/কেএমএল