মো. নাজির হোসেন, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার চর-কেওয়ার ইউনিয়নের খাসকান্দি গ্রামে আ’লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর মামলার ঘটনায় পুরুষ শূন্য থাকা বেশ কিছু বাড়িঘরে লুটপাট ও ভাঙচুর চলছে। গত শনিবার (১৬ জুলাই) ভোর রাতে সংঘর্ষের পর হতে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ২০টি ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার নতুন প্রধানমন্ত্রী দিনেশ
সরেজমিনে দেখা যায় ওই গ্রামের প্রায় শতাধিক ঘর তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। গ্রামে কিছু নারী, শিশু ও বৃদ্ধ মানুষ দেখা গেলেও গ্রামটি প্রায় পুরুষ শূন্য। গ্রামের অধিকাংশ ঘরই তালাবদ্ধ।
স্থানীয় ও এলাকাবাসী জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খাসকান্দি গ্রামের আওয়ামীলীগের সমর্থক মামুন হাওলাদার ও আহমেদ হাওলাদারের মধ্য দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। গত তিন বছরে এই পক্ষ দুটি ১৫-১৬ বার সংঘর্ষে জড়ায়। এ সমস্ত সংঘর্ষে ব্যবহার করা হয় আগ্নেয়াস্ত্র। এতে উভয় পক্ষের ২০/২৫ জন মানুষ গুলিবিদ্ধসহ প্রায় শতাধিক লোক গুরুতর আহত হয়। পূর্ব শত্রুতা আর আধিপাত্য নিয়ে গত শনিবার ভোরে আবারও উভয় পক্ষ সংর্ঘষে জড়ায়। সে সময় দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় দুইজন গুলিবিদ্ধসহ ১০ জন আহত হয়। হামলায় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে।
আরও পড়ুন: নির্মাণ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
ঘটনার পর সোমবার (১৮ জুলাই) মামুন পক্ষ, প্রতিপক্ষের ৫১ জনের বিরুদ্ধে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় মামলা করে। সংঘর্ষ এড়াতে ওই গ্রামে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।মামলার পর থেকে এলাকা ছাড়া হয়েছে কয়েকশ পরিবার। পুরুষ শূন্য হয়েছে সমগ্র গ্রাম। অভিযোগ উঠেছে, এ সুযোগে একটি চক্র মানুষ শূন্য বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করছে। মামলার পর থেকে পলাতক রয়েছে আহমেদ হাওলাদারদের লোকজন। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষও ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এ সুযোগে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রায় ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর লুটপাট করে প্রতিপক্ষ মামুনের লোকজন।
খাসকান্দি গ্রামের বৃদ্ধা জোসনা বেগম (৭০) বলেন, ‘ঝগড়ার পর গ্রামে বেটা-পোলাপান কেউ নাই। মারধরের লেগা মহিলাও বাচ্চাগো লইয়া গেছেগা। ককটেল, ভাঙচুর করে আমগো ভয় লাগে।’
আরও পড়ুন: কোন কোন এলাকায় লোডশেডিং
আহমেদ হাওলাদার জানান, শনিবারের হামলার পরে আমরা গ্রাম ছাড়া। এ সুযোগ মামুন হাওলাদারের লোকজন আমার বড় ভাই আলী আকবর হাওলাদার, মজিবুর হাওলাদার, মিজানুর হাওলাদার, ইতালি প্রবাসী আক্তার হাওলাদার, মাহাবুল হাওলাদার, সালামত, জহুরদ্দিন, আলমগীর মিস্ত্রী, হোসেন হাওলাদার,আলী হাওলাদার, জাসু সরদার, মজিবুর বেপারী, নাছির বেপারীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে। এতে নগদ টাকা, স্বর্ণ অলংকার এবং ফ্রিজসহ আসবাবপত্র লুট করেছে।
গ্রিস প্রবাসী মিজানের স্ত্রী নুরজাহান (৪৫) বলেন, ‘আমার স্বামী গ্রিসে থাকে। সংঘর্ষের পর মামুনদের লোকজন আমার বাড়ির ডিস লাইন কেটে নিয়ে গেছে। বাড়িতে ককটেট হামলা করে। লুটপাট করে সব নিয়ে গেছে। সোমবার ওরা আমার বাড়ি আবারও ককটেট হামলা চালায়। ঘরের ভিতরও হামলা হয়। ককটেল হামলায় আমার ঘরে আগুন ধরে যায়। পাশের বাড়ির মহিলারা পানি দিয়ে নিভায়। জীবনে নিরাপত্তায় বাড়ি ছেড়ে চলে আসছি।’
আরও পড়ুন: অধ্যক্ষকে পেটানোয় চেয়ারম্যান গ্রেফতার
ইতালি প্রবাসী আক্তার হাওলাদার মুঠোফোনে বলেন, শনিবার গ্রামে থেকে একটি পক্ষকে বের করে দেওয়া হয়। পরে আমার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মামুন হালদার তাদের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা কোন বাড়িতে হামলা লুটপাট করিনি। তারা আমাদের লোকজনকে মারধর করেছে। আমরা মামলা দায়েরের পর হতে গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এখন তারা নিজেদের ঘরে নিজেরা ভাঙচুর করে আমাদের বিরুদ্ধে কাউন্টার মামলা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: পূর্ণিমাকে প্রাক্তন স্বামী ফাহাদের শুভেচ্ছা
মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তারিকুজ্জামান বলেন, সংঘর্ষের পর থেকে পুলিশ ওই এলাকায় পালাক্রমে অবস্থান করছে। লুটপাটের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এফএ