বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর থেকে:
এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার হাটকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে মার্কেট নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে।
সোমবার (১৩ জুলাই) সকালে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের হস্তক্ষেপে দোকানঘর নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কৃষ্ণপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. জসীমউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় ও এর মাঠের সঙ্গে স্থানীয় ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষ্ণপুরে যুক্তফ্রন্ট সরকারের প্রাদেশিক পরিষদের তৎকালীন সদস্য মরহুম আব্দুল হামিদ চৌধুরীর বাড়িতে আসতেন। বিকালে আমি নিজে তাকে এই মাঠে খেলতে দেখেছি। কালের সাক্ষী মাঠটির সংরক্ষণ ও সংস্কার করা উচিত।’
ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ওই এলাকার বাসিন্দা আজগর হোসেন সুজন বলেন, ‘মার্কেট হলে একসময় হয়তো পরিত্যক্ত হয়ে ঐতিহ্যের মাঠটিই হারিয়ে যাবে।’
হাট কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিলাল হোসেন ফকির বলেন, ‘কোনো টেন্ডার ছাড়াই মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের মিশনে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছিল। এতে শুধু অপ্রশস্তই হবে না, লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেলে দর্শকশূন্য মাঠটি পরিত্যক্ত ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যও হয়ে যাবে। এজন্য এলাকাবাসী এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।’
তার অভিযোগ, এর আগেও অন্যপাশে ২৯টি দোকানঘর তুলে জামানতের ৫৫ লাখ টাকা ও মাঠ ভরাটের নামে কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১২ লাখ ২৩ হাজার টাকার বিল-ভাউচার দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা বিভাগের শিক্ষা পরিদর্শক মো. ছালেহউদ্দিন সেখের সরেজমিনে তদন্ত প্রতিবেদনে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শাতে বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অথচ আবারও দোকান বাণিজ্য শুরু হয়েছে।
স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আক্তারুজ্জামান তিতাস বলেন, ‘কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে এসব দোকান নির্মাণ করা হয়। দোকান করলেও মাঠে খেলার জায়গা থাকবে। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, কোনো টেন্ডার ছাড়াই এসব দোকান নির্মাণ করা হচ্ছিল। এ বাবদ এখনো কারো কাছ থেকে জামানতের টাকা নেওয়া হয়নি।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠের সঙ্গে বাণিজ্যিক কেন্দ্র চলতে পারে না। এটি জানার পরে দোকান নির্মাণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই স্থাপনা তৈরির উদ্যোক্তারা শিগগিরই এসব মালামাল সরিয়ে নেবেন বলে আশা করি।’
সান নিউজ/ এআর