বিভাষ দত্ত, ফরিদপুর থেকে:
করোনা মহামারীতে গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ফরিদপুরের খামারিরা। ঈদ-উল আজহাকে সামনে রেখে সম্পূর্ণ দেশি খাবারে নির্ভর পশুগুলোকে লালন-পালন ও কোরবানির উপযুক্ত করে গড়ে তুললেও এখন সঠিক দাম না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
প্রান্তিক খামারিরা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে গরু কিনে নিয়ে বিক্রি করতেন। কিন্তু এ বছর করোনার কারণে বাইরের কোনো ব্যবসায়ীর এখন পর্যন্ত দেখা মেলেনি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও খামারের এসব গরুর দাম তেমন বেশি বলছেন না। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।
তবে অনলাইন বাজার চালু করে চাষি ও খামারিরা এর মাধ্যমে পশু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশ্বস্ত করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কোরবানি উপলক্ষে গরু-ছাগলের স্বাস্থ্য নিয়ে বিশেষ নজরদারিও শুরু করেছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি।
ফরিদপুর জেলায় ছোট-বড় মিলে তিন হাজারের বেশি খামার রয়েছে। বিশাল আকৃতির গরু এখন ফরিদপুরের খামারগুলোতে। উন্নত জাতের অল্প বয়সী গরু কিনে কোরবানির জন্য তৈরি করা হয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় ভিটামিনযুক্ত খাবার বিশেষ করে কাঁচা ঘাস, খড় এবং দানাদার খাবার, খইল, ভুশি ও চালের গুড়া এগুলো খাইয়ে মোটা-তাজা করা হয়েছে সেগুলোকে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার খলিলপুর এলাকার চুন্নু সরদার নিজের ডেইরি খামারের ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড় (বাছুর) চার বছর ধরে সন্তানের মতো লালন-পালন করেছেন। আদর করে নাম রেখেছেন ‘আলী শান’। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয় এর পেছনে। বিশাল আকৃতির ষাড়টিতে ৩২ থেকে ৩৫ মণ মাংস আশা করছেন এই খামারি। তার দাবি, দেশে যেক’টি বড় ষাড় গরু আছে. তার মধ্যে আলী শান অন্যতম। ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কিছুটা লাভ থাকবে। তবে কোরবানিতে বিক্রি করতেই হবে, তা না হলে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বেন তিনি।
প্রতি বছর কোরবানির আগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা এলেও এ বছর এখন পর্যন্ত কারো দেখা না পেয়ে সেই ক্ষতির আশঙ্কাই করছেন চুন্নু সরদার।
ফরিদপুর প্রণিসম্পদ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর কোরবানির জন্য ৪৬ হাজার গরু-ছাগল প্রস্তুত আছে। জেলায় এ বছরের চাহিদা ৩৫ হাজার ৪০০টি। চাহিদার অতিরিক্ত প্রায় ১১ হাজার পশু বাইরে পাঠানো যাবে।
জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরুল্লাহ মো. আহসান বলেন, ‘করোনার মধ্যেও আমরা খামার পরিদর্শন করছি। খামারিরা যেন খামার পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রেখে, সময়মতো ভ্যাকসিন দিয়ে সুস্থ-সবল গরু বাজারে তুলতে পারেন, সেজন্য পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা অনলাইন বাজার চালু করেছি। খামারি ও চাষিরা গরু-ছাগলের ছবি, ওজন ও মূল্য নির্ধারণ করে পেজে পোস্ট দিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।’
সান নিউজ/ এআর