নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ একরাম হাসান খান ভালো চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল মেশানোর সময় ধরা পড়েছেন। মানুষকে এভাবে ঠকানোর বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে উপজেলা পরিষদ। জেলা প্রশাসন ও জেলা খাদ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বিষয়ে তদন্ত করে দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনদিনে ৪২ বস্তায় ২০ টন নিম্নমানের চাল ভালো চালের সঙ্গে মেশানোর পর খবর পেয়ে রোববার (১২ জুলাই) ঘটনাস্থলে যান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম জাহিদুল হাসান জাহিদ। তার হস্তক্ষেপে বাকি বেশকিছু নিম্নমানের চাল বস্তাভর্তি করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহিদ বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একরাম শ্রমিকদের দিয়ে খাদ্যগুদামে রাখা ভিজিডির চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল মিশিয়ে বস্তায় ভরছিলেন। গত তিনদিন ধরে এই নিম্নমানের চাল মেশানোর খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে সরকারি খাদ্যগুদামের ভালো চালের সঙ্গে নিম্নমানের চাল মিশিয়ে বস্তায় ভরার ঘটনার সত্যতা পাই। এ সময় নিম্নমানের ৪২ বস্তা চাল খাদ্যগুদামের ভেতরে ছিল। আরও বেশকিছু নিম্নমানের চালের সঙ্গে ভালো চাল মেশানো অবস্থায় মেঝেতে পড়েছিল। সেগুলো বস্তায় ভরা হচ্ছিল। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানিয়েছি। ব্যবস্থা নিতে বলেছি ।’
তিনি বলেন, ‘আমি যাওয়ার আগেই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ২০ টন নিম্নমানের চাল ভালো চালের সঙ্গে শ্রমিকদের দিয়ে মিশিয়ে ফেলেছেন। তিনি কেনো মানুষকে এভাবে ঠকিয়ে যাচ্ছেন, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে।’
অভিযুক্ত মোহাম্মদ একরাম হোসেন খান জানান, চলতি বছরে ৩৮৫ মেট্রিকটন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য রয়েছে। ইতোমধ্যে ১০২ মেট্রিকটন চাল কুসুমদি গ্রামে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাই নূরুজ্জামানের 'নূর অ্যান্ড ব্রাদার্স রাইচ মিল' এবং ফজলুর রহমানের 'বিসমিল্লাহ রাইচ মিল' থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে । বাকি চাল কোথা থেকে কেনা হয়েছে, তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
সরকারি গোডাউনে নিম্নমানের চাল মেশানোর বিষয়ে এই খাদ্য কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক সময় মিলারদের কাছ থেকে পাওয়া চালের সব বস্তা পরীক্ষা করা হয় না। সে কারণে এমনটি হতে পারে।’
ইউএনও মো. রাশেদুর রহমান বলেন, ‘চাল মেশানোর খবর পেয়ে দ্রুত আমি গোডাউনে যাই। এবং ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তবে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফরিদপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো সাহিদার রহমান বলেন, ‘খবর পেয়েই আমি দ্রুত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নিম্নমানের চালের অস্তিত্ব পেয়েছি। তদন্ত টিম গঠন করা হবে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা দোষী প্রমাণিত হলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘খাবার চালে ভেজাল বা পচা চাল মেশানো ঘটনার সত্যতা মিললে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক না কেনো। সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে পার পাওয়া যাবে না। এ বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থানে।’
সান নিউজ/ এআর