নিজস্ব প্রতিনিধি:
গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। একটানা বৃষ্টির ফলে পানি বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা, মেঘনা নদী এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলোর পানিও।
ভারী বর্ষণের ফলে দেশের পাঁচটি নদীর সাতটি পয়েন্টের পানি এখন বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে এ অবস্থা চলতে থাকলে আরও বেশ কিছু পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ওপরে চলে যাবে।
এদিকে পদ্মা, তিস্তা, ধরলা, সুরমা, সোমেশ্বরী নদীর পানিও বিপদসীমার ওপরে উঠবে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নাটোর, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর ও নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে , যমুনা নদীর ফুলছড়ি পয়েন্টে পানি ৪ সেন্টিমিটার, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার, সুনামগঞ্জ পয়েন্ট ৫৪ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন নদীর সারিঘাট পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার, যাদুকাটা নদীর লরেরগড় পয়েন্টে ১২৫ সেন্টিমিটার এবং গূড় নদীর সিংড়া পয়েন্টের পানি এখন ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে নদীর পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদনদীগুলোর পানি বাড়ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি এখন স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় বাড়তে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্টে, যমুনা নদীর বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি ও কাজিপুর পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আপার মেঘনা অববাহিকার সুরমা নদী সিলেট পয়েন্টে, পুরাতন সুরমা নদীর দেরাই পয়েন্টে এবং সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, নাটোর, সিলেট , সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।
এদিকে ভারী বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার কারণে দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
সতর্কবার্তায় বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে হবে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আজ রাত ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে পূর্বাভাসে বলা হয়, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে ঝড়ো বা দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।
আজ দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে বগুড়ায় ১০৭ মিলিমিটার। এছাড়া ঢাকা বিভাগের মধ্যে টাঙ্গাইলে ৪২ মিলিমিটার, ময়মনসিংহে ৭৮, চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে কুতুবদিয়ায় ৪৮, সিলেটের শ্রীমঙ্গলে ১৬, রংপুরের তেঁতুলিয়ায় ১০৫, খুলনার কুমারখালীতে ২৮ এবং বরিশালের ভোলায় ২৯ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি হবে। এর ফলে নদনদীগুলোরও পানি বৃদ্ধি পাবে। আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে মধ্য জুলাইয়ে বন্যার শঙ্কার কথা বলা হয়েছিল।