নিজস্ব প্রতিনিধি:
নদীর ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে অন্যত্র সরে গিয়েছিলেন ছেলে মেয়ে স্ত্রী নিয়ে। সেখানেও বন্যার থাবা। সেই ধকল কাটিয়ে একটু পানি নামতেই আবার নতুন করে বসত বাড়ি গড়ার চেষ্টা, এরই মধ্যে আবারও দ্বিতীয় দফায় বন্যা। দুর্গতি যেন লেগেই আছে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর জাহাজের আলগা গ্রামের বাসিন্দাদের।
সদ্য বিদায় নেওয়া বন্যার ধকল সামলে ওঠার আগেই আবারও বন্যার কবলে পড়তে যাচ্ছে চর ও দ্বীপচরের লাখো বাসিন্দা। আবারও বন্যার আশঙ্কায় চরম উদ্বিগ্নতায় দিন কাটছে তাদের। পাশাপাশি কর্মহীন হয়ে পড়ায় খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় পরিবার ও গবাদি পশু নিয়ে অনিশ্চয়তার দিন কাটছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকা এসব চরবাসীর।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে জুলাইয়ের মাঝামাঝি আবারও একটি মধ্য মেয়াদি বন্যার কবলে পড়তে পারে নদ-নদী অববাহিকার কয়েক লাখ মানুষ। তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সম্ভাব্য বন্যা মোকাবিলায় যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। মানুষের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি শিশু ও গবাদি পশুর জন্য খাদ্য সহায়তা দিতে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের।
তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। আগামী চার থেকে পাঁচ দিন এসব নদ-নদীর সবকটি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থেকে বিপদসীমা অতিক্রম করে জেলায় মাঝারি মেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার সদর উপজেলাসহ ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী ও রৌমারী উপজেলার অর্ধশতাধিক ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। সদ্য শেষ হওয়া বন্যায় ঘরবাড়ির ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই আবারও বন্যার আশঙ্কায় পরিবারের ও গবাদি পশুর খাবার জোগান নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় চরাঞ্চলের মানুষের ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাটক্ষেতে পলি জমে পাটগাছের অর্ধেক বালুতে তলিয়ে গেছে। কয়েকশ’ বিঘা জমির আউশ ধানসহ সবজি জাতীয় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। এখনও ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি অনেক চরবাসী।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট গ্রামবাসীরা জানান, এক সপ্তাহ হয়নি বাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। এখনও ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেননি। হাতে কাজও নেই, রোজগারও নেই। আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা সৃষ্টি হলে পরিবারের লোকদের খাবার জোটানোই তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
একই ইউনিয়নের মশালের চরের মাইদুল বলেন, ‘বান আসলে তাও নাওয়ের মধ্যে ঠাঁই নিই, কিন্তু খাবার জোটামো কেমন করি! দ্যাশের শ্যাষ সীমাত থাকি, কাইয়ো সহজে ত্রাণ ধরি আইসে না। বান আসলে হামার যেমন তেমন, গরু ছাগলের খাওয়ার খুব কষ্ট হয়।’
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের মিলন সরকার জানান, সদ্য শেষ হওয়া বন্যায় আশ্রয়কেন্দ্র সহ বিভিন্ন বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষ মাত্রই বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে। তারা এখনও বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়া ঘরবাড়ি মেরামত করার সুযোগও পাননি। এর মধ্যে আবারও পানি বৃদ্ধি তাদের নতুন করে ভাবাচ্ছে।
তবে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, বন্যার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পর্যাপ্ত খাদ্য ও নগদ টাকা মজুত রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সবকটি উপজেলায় ৪ লাখ সাড়ে ২৮ হাজার পরিবারের জন্য ভিজিএফ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বন্যা মোকাবিলায় খাদ্য সহায়তা হিসেবে ৩৯০ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও গো খাদ্য বাবদ আরও দুই লাখ করে টাকা মজুত রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী কয়েকদিন জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়বে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মধ্য জুলাইয়ে জেলার নদ-নদী অববাহিকার উপজেলাগুলো আবারও একটি মাঝারি মাত্রার বন্যার কবলে পড়তে পারে যা ৭-১০ দিন স্থায়ী হতে পারে।
জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলার প্রশাসনের তরফ থেকে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল ও শুকনো খাবারসহ শিশু খাদ্য সরবরাহের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গবাদি পশুর খাদ্য সহায়তা দেওয়ার জন্যও বরাদ্দ পাওয়া গেছে যা প্রয়োজন সাপেক্ষে বণ্টন করা হবে।
এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সান নিউজ/ বি.এম.