উলিপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত ইউনিয়নগুলো। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে মানুষের ঘর-বাড়ি, গবাদিপশুসহ সবজি ক্ষেত। বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মানুষ ও গবাদিপশু গাদাগাদি করে ঠাঁই নিয়েছে গুচ্ছ গ্রামগুলোতে। সংকট সৃষ্টি হয়েছে খাদ্য, গো খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন
তথ্য সংগ্রহের কাজে ব্যবহার হওয়া নৌকাগুলো দেখলেই ত্রাণের আসায় ছুটে আসছে বানভাসিরা। ভাসমান চরে গুচ্ছ গ্রামগুলোতে আশ্রয় নেয়া মানুষ বলছেন, ‘আমরা সরকারি, বে-সরকারি কোন সাহায্য, সহযোগিতা পাই না।’
বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সারাদিন ব্রহ্মপুত্র ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে তলিয়ে গেছে ঘর-বাড়ি, কৃষকের আবাদসহ গবাদিপশুর আশ্রয় নেওয়া জায়গাগুলো। ডুবন্ত ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে সুখের চরে জেগে থাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প গুচ্ছ গ্রাম ও চর ঘুগুমারির গুচ্ছ গ্রামে। চর ঘুঘুমারিতে আশ্রয়ণের ঘরগুলো এখনো বিতরণ করা সম্ভব না হলেও সেখানে ৬০টি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন চরের প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।
সুখের চরে জাগ্রত গুচ্ছ গ্রামে আশ্রয়নের ঘর রয়েছে ৪০টি। সেখানেও আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন চর থেকে আসা প্রায় দুইশতাধিক মানুষ। মানুষের সাথে আশ্রয় নিয়েছে তাদের গবাদি পশুপাখিগুলো। সেখানে খাদ্য সংকটে পড়েছে মানুষ ও গবাদিপশুপাখি। দুটি আশ্রয়ণের উচু জায়গায় শত শত মানুষের জন্য টিউবওয়েল রয়েছে মাত্র দুটি।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু আমাদের অহঙ্কার
পানির সংকট দূর করার জন্য দুর-দুরান্তে নৌকা বাইয়ে বিশুদ্ধ পানির খোঁজে ছুটে বেড়াচ্ছে আশ্রিতরা। স্যানিটেশন ব্যবস্থাও একে বাড়ে নাজুক। বানের পানি নামতে শুরু করলেও ঘরে ফেরার সাহস পাচ্ছে না নিম্নাঅঞ্চলের মানুষ। এখনো বাড়ির আঙ্গিনা দিয়ে স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
চরাঞ্চলগুলোতে নেই কোনো এনজিও'র কার্যক্রম। সকল প্রকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত চরের বানভাসিরা। প্রতি বছর জেগে থাকা চরের মাটির উপর যে কৃষি ফসল ফলায় তাই দিয়ে বছর পার করে তারা। এবারের বন্যায় চিনা বাদাম, পাট ক্ষেত ,সবজি জমি সব তলিয়ে গেছে। উৎপাদন সংকটসহ পুষ্টিহীনতায় পরার সম্ভাবনাও দেখা দিবে ভাবছে চরের মানুষ।
সুখের চর গুচ্ছ গ্রামে দক্ষিন চর, নাউয়ার চর থেকে এসে আশ্রয় নেয়া, সাইদুল, আকবর মোল্লা, নার্গিছ বলেন, ‘আমরা নয়দিন থেকে গুচ্ছ গ্রামে আছি আমাগো কেউয়ো খাইব্যার দেয় নাই, বানের আগে আমাগো যা জমান আছিলো তাই খায়া বাঁইচা আছি।’
আরও পড়ুন: জ্বালায়-জ্বালায় মরছে তারা
জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি সাহায্য যা পাচ্ছি তা দিয়ে বানে ভাসা মানুষদের কাছে পৌঁছা সম্ভব হচ্ছে না।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, দুধকুমার, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদী চতুরদিকে তাঁর ইউনিয়নটিকে ঘিরে রেখেছে, শতশত ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হচ্ছে, সেই সাথে সরকারি যে সাহায্য ইতোমধ্যে পেয়েছি তা অপ্রতুল।
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল কুমার জানান, সরকারি সাহায্য যেটুকু আসছে সেটুকু নির্ভূলভাবে বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে বিতরণ করা হচ্ছে। গো-খাদ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কোম্পানিতে অর্ডার করা হয়েছে সময়মত সেগুলো বানভাসিদের মাঝে পৌঁছে দেয়া হবে।
সান নিউজ/এফএ