খায়রুল খন্দকার, টাঙ্গাইল : উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারী বর্ষণে টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আরও পড়ুন : সুনামগঞ্জ থেকে পানি নামতে শুরু করেছে
রোববার (১৯ জুন) গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে গত কয়েক দিনে পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার পূর্ব পাড়ে প্রচুর ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অসংখ্য ঘর-বাড়ী ও বসতভিটা। প্রতি বছর নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছেন উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়া পাড়ার যমুনা তীরবর্তী লোকজন।
গত কয়েক বছরের ভাঙনে ঘর-বাড়ি ও ফসলের জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শত শত পরিবার।
আরও পড়ুন : সোমবার থেকে রাত ৮টার পর মার্কেট বন্ধ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী ভালকুটিয়া ও চিতুলিয়া পাড়া এলাকায় প্রায় ৪'শ থেকে ৫'শ মিটার জুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘরবাড়ি ও বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে পাকা আধাপাকা ঘরবাড়ি সহ অসংখ্য স্থাপনা।
গোবিন্দাসী ঘাট থেকে ভালকুটিয়ার কিছু অংশ পর্যন্ত জিওব্যাগ ফেলা হলেও ভালকুটিয়ার কিছু অংশ এবং চিতুলিয়া পাড়ার প্রায় ৫'শ মিটার এলাকায় ভাঙন রোধে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এছাড়া যমুনা তীরবর্তী উপজেলার জিগাতলা গ্রামের বেশ কিছু অংশেও দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।
আরও পড়ুন : চট্টগ্রাম বন্দরে ২ ভারতীয় নাবিকের মৃত্যু
এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের চাপে বর্ষার ভাঙনে ভালকুটিয়া গ্রামে কিছু জিওব্যাগ ফেলা হলেও চিতুলিয়া গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়ী থেকে আব্দুস সোবহানের বাড়ী পর্যন্ত কোন জিও ব্যাগ ফেলা হয়নি।
ভালকুটিয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের নিজস্ব অর্থায়নে ৬'শ প্লাস্টিকের ব্যাগ স্থানীয় লোকজনের স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙন রোধের জন্য ফেলা হয়। কিন্তু তাতে কোন কাজ হচ্ছে না। সেখানে আরও ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক বছর ধরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
আরও পড়ুন : প্রয়োজনে আরও রাস্তা কাটা হবে
ফলে প্রতিবছর তাদের এই ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
যমুনা তীরবর্তী ভাঙন কবলিত চিতুলিয়া পাড়া গ্রামের আলামিন বলেন, যমুনা নদীটি আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় এক থেকে দেড় মাইল দূরে ছিল। গত কয়েক বছর ধরে যমুনার ভাঙনে আমাদের ফসলের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন একমাত্র থাকার জায়গাটুকুও ভেঙে যাচ্ছে।
অতি দ্রুত ভাঙন রোধে কাজ না করলে আমরা বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাবো। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের কাছে আমাদের একটাই দাবি যমুনা পূর্ব পাড়ে অতি দ্রুত একটি স্থায়ী বাঁধ দেয়া হোক।
আরও পড়ুন : ভেনেজুয়েলার তেল যাচ্ছে ইউরোপ
চিতুলিয়া পাড়া গ্রামের জবেদা বেগম বলেন, আমার বাড়ি থেকে নদী অনেক দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে নদীর কিনারে এসে পরেছি। যেকোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে ঘরবাড়ি। এখন ঘরবাড়ি ভেঙ্গে গেলে আমাদের যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকবে না।
পরিবার পরিজন নিয়ে নিঃস্ব হয়ে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে যমুনার পূর্ব পাড়ে একটি স্থায়ী বাঁধের দাবি করে আসছি। বিভিন্ন সময় মানববন্ধন করেছি কিন্তু তাতেও কোন লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন : মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আটক
বর্ষা আসলে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিওব্যাগ ফেলা হলেও সেগুলো সহ ফসলের জমি, ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি, খাবার চাই না যমুনা পূর্বপাড়ে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে আমরা ভূঞাপুর উপজেলার যমুনা পূর্ব পাড়ের ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কিছু কিছু জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। পরিবেশ অনুকূলে আসলে যমুনা পূর্বপাড়ে আড়াই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
তিনি আরো বলেন, যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অন্য সব নদীর পানিও বাড়ছে। এভাবে পানি অব্যাহত থাকলে জেলায় বড় ধরনের একটি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
সান নিউজ/এইচএন