আল আমিন শাওন, শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে রোববার (১৩ জুন) রাতে প্রতিপক্ষের নির্বাচনী ক্লাব, বাড়ি-ঘর ভাংচুর, সাবেক এমপি’র বাড়িতে হামলাসহ গুলি, বোমা বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের অভিযোগ উঠেছে।
আরও পড়ুন: দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার
এ সময় উভয় গ্রুপের হামলায় গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়েছে। আহতদের জাজিরা উপজেলা হাসপাতাল, শরীয়তপুর সদর হাসপতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসা করা হয়েছে। এ নিয়ে দু গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে উভয় গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
আহত জোনায়েত মাদবর, সাগরী বেগম ও জাজিরা থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রড় গোপালপুর ইউনিয়নে আগামী ১৫ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে কে. এম জামিল হোসেন (মোটর সাইকেল) ও অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী, বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার (আনারস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। রোববার রাতে বড় গোপালপুর ইউনিয়নের টেকের কান্দি গ্রামে উভয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ভোট চাইতে যায়।
আরও পড়ুন: অস্ত্রধারীদের হামলায় নিহত ১০০
এ সময় উভয় গ্রুপের মধ্যে প্রথমে কথা কাটা কাটি হয়। পরে তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় উভয় গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র রাম দা, টেটা, বল্লম ও শত শত হাত বোমা নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ২ ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে জাকিয়া বেগম (৫০), সুর্য বেগম (৬৫), সাগরি বেগম (৩৫), রুবেল কবিরাজ (৩০), আক্কাস কবিরাজ (৪০), মিঠু মাদবর (৩০), ইমরান মাদবর (৩৬), কিনাই খালাশী (৬০), সোহাগ সরদার (৩৭), রেজা সরদার (৪০), তুহিন মুন্সি (৩৫), আবুল কালাম সরদার (৪০), জোনায়েদ মাদবর (২০), সোহাগ সরদার, রেজা সরদার, কালামিয়া সরদার, তুহিন মুন্সি, জোনায়েদ মাদবর সহ অন্ততঃ ৩০ জন মারাত্মক আহত হয়েছে।
আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ সোহাগ সরদার, রেজা সরদার ও আবুল কালাম সরদারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাবিদের জাজিরা উপজেলা হাসপাতাল ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় হামলাকারীরা সাবেক এমপি মাষ্টার মজিবুর রহমানের বাড়ি, ৩ টি নির্বাচনী ক্লাব, ১৫টি বাড়ি ঘর ভাংচুর করেছে। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু থেকে আসবে ১৬০৪ কোটি
এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারবে কি না? তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি সুষ্টভোট নিয়ে ও শঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে বড় গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী কে. এম জামিল হোসেন (মোটর সাইকেল) এর সমর্থক ও সাবেক এমপি মাষ্টার মজিবুর রহমানের ভাতিজা নাহিদুল রহমান নান্নু বাদী হয়ে ৮৩ জনকে আসামিকে জাজিরা থানায় একটি দায়ের করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: সক্রিয় জুয়া চক্রের সন্ধান
অপরদিকে, বড় গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার (আনারস) বাদী হয়ে ৫১ জনকে আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনা ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনায় পুরো ইউনিয়নের পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় ভোটার, আতাউর রহমান, রমিজ উদ্দিন, মিজানুর রহমান বলেন, অস্ত্র ও বোমা নিয়ে যে প্রকাশ্যে সংঘর্ষ হয়। তাতে আমরা নিবিঘ্নে ভোট দিতে পারবো কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে, আমরা আতঙ্কিত।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলরকে হত্যার হুমকি
বড় গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী কে. এম জামিল হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার ও তার সমর্থক বাবুল আকনসহ তাদের সমর্থকরা অন্যায়ভাবে আমার বাড়িঘর, নির্বাচনী ক্লাব ও সাবেক এমপি মাষ্টার মজিবুর রহমানের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় আমার অনেক লোকজন আহত হয়েছে। হামলাকারীরা মসজিদেও ভাঙচুর করেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।
অন্যদিকে, চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহবুবুর রহমান লিটু সরদার বলেন, টেকের কান্দি এলাকায় ভোট চাইতে গেলে চেয়ারম্যান প্রার্থী জামিল হোসেনসহ তার সমর্থকরা আমার সমর্থকদের ওপর হামলা করে। ব্যাপক বোমা ও গুলি বর্ষন করে। এতে আমার ৩ জন গুলি বিদ্ধসহ ১০/১২ জন মারাত্মক আহত হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আরও পড়ুন: বিশ্বে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হার দেশে সর্বোচ্চ
এ ব্যাপারে জাজিরা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বড় গোপালপুর এলাকায় দুই চেয়াম্যান প্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েত করা হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
সান নিউজ/কেএমএল