কামরুজ্জামান স্বাধীন, উলিপুর (কুড়িগ্রাম): সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামের উলিপুরে এ বছর মৌসুম না মেনেই শুরু হয়েছে অকালে কাল। জৈষ্ঠ্য ও বৈশাখ মাস থেকে শুরু হয়েছে ভারি বৃষ্টি আর উজানের ঢল। এই বৃষ্টি আর ঢলের স্রোতে বহুবার ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। আর এবার ভাঙ্গছে তিস্তা নদীর পাড় আর বসতভিটা সঙ্গে কৃষকের পাটের জমি ও সবজি ক্ষেত।
আরও পড়ুন: জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে খালেদা জিয়া
এ পর্যন্ত প্রায় ৩শতাধিক বসতভিটা বিলীন হয়েছে এবং শত শত হেক্টর ফসলি জমি গিলে ফেলেছে তিস্তা নদী। হুমকির মুখে রয়েছে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষ, গৃহপালিত পশু ও নদী রক্ষাবাঁধ হিসেবে ব্যবহারের উচু সড়কটি সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক সংযোগ।
এমন ভাঙ্গনের দেখা দিয়েছে এই উপজেলার তিস্তা বেষ্টিত বজরা ইউনিয়নের সাদা লস্কর গ্রামে। বছরের পর বছর এভাবে ভাঙ্গনের শিকার হয়ে আবাদি জমি ও ঘর-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকে।
শনিবার (১১ জুন) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাদা লস্কর গ্রামের প্রায় ৫শত মিটার এলাকার আবাদি জমি এবং ৩শতাধিক ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ওই এলাকার মানুষ ঘর-বাড়ি সড়িয়ে দ্রুতই নিরাপদে ফেরার চেষ্টা করলেও মিলছে না কাজের মানুষ। পারিবারিকভাবে যতটুকু সম্ভব ততটুকুই দ্রুতই সরিয়ে নিচ্ছে অন্যত্র। কাঠের গাছ, ফলের গাছ কম মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছে ফরিয়াদের হাতে। হুমকিতে আছে অসংখ্য স্থাপনা। সাদা লস্কর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল মালেক ও তার স্ত্রী শরিফা বেগম জানান, 'হামরা কোনটে যামো এলা এবার নিয়্যা ১৩ বার ভাঙ্গিল ব্যাহে হামার বাঁচার উপায় নাই।' একই কথা জানালেন, ওই গ্রামের ওয়াজেদ, গোলজার, রুবেল মিয়া। তারা আরো জানান, তাড়াতাড়ি হামাক বাঁচার ব্যবস্থা করো ব্যাহে।' ওই এলাকার মানুষ দ্রুতই তাতের সংরক্ষিত স্থাপনাগুলো ওপারের বা এপারের শুকনা উচু জায়গা খুজে আশ্রয় নিচ্ছে। কেউবা এপারের শুকনা উচু জায়গা কমমূল্যে ভাড়া নিয়ে আশ্রয়ের পথ খুজছে।
তিস্তা নদীর ওপারের সাদুয়া দামারহাট গ্রামের গাছ ক্রেতা মনিরুজ্জামান জানান, এই সময়ে যে দামে গাছ কিনছি তাতেও বসতভিটার মালিকরা উপযুক্ত দাম পাচ্ছে। বজরা ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুৎ অভিযোগ কেন্দ্রের ইনচার্জ আশরাফুল আল আমিন জানান, গত অর্থ বছর সরকারের লাখ লাখ টাকা খরচ করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং বিদ্যুৎ সংযোগও দেয়া হয় আর এ বছর তিস্তার স্রোতের তান্ডবের কারনে বৈদ্যুতিক খুটিগুলো ঝুকিযুক্ত হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে খুটিগুলো তুলে নিতে হচ্ছে। নদী স্বাভাবিক হলে আবার সংযোগ দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
এ পর্যন্ত প্রায় ৩টি পোল তুলে নেয়া হয়েছে আরো ১১ টি তোলার প্রস্তুতি চলছে। কুড়িগ্রাম জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ভাঙ্গনের বিষয়টি অনেক আগে অবগত হয়েছি, ইতোমধ্যে সাদুয়ার দামারহাট এলাকায় ভাঙ্গনরোধের কাজ শুরুহয়েছে। সাদা লস্কর এলাকায় কাজ করার অনুমোদন পেলেই ভাঙ্গন রোধের কাজ শুরু হবে।
সান নিউজ/এনকে