রহমত উল্লাহ, টেকনাফ : তিন যুগের ও বেশি সময় ধরে বঙ্গোপসাগরে ভাঙনে নুনা পানির সঙ্গে জীবন সংগ্রাম করে টিকে থাকা শাহপরীর দ্বীপের মানুষের দুঃখ দূর হলে ভূমিহীন পরিবারের দুঃখ রয়ে গেছে।
আরও পড়ুন : কারও কাছে মাথানত করিনি
প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই আতঙ্কগ্রস্ত হয় দ্বীপবাসী। প্রতিনিয়ত জোয়ারের তীব্র আক্রমণ তাড়া করে তাদের নাফ নদীর তীরে অবস্থিত বাসিন্দাদের। তাই দ্বীপবাসীকে দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্তি দিতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। কিন্তু জালিয়া পাড়া মানুষের দুর্দশা রয়ে গেছে। এদিকে জুলাই মাসের আগে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় সাগরের জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবেন শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দারা। জেলে পল্লী আছে নাফের পানির আতঙ্কে। নোনা পানির সাথে যুদ্ধ করে ঠিকে আছে। নাফ নদীর তীরের শতাধিক বাসিন্দা।
বাংলাদেশের শেষ সীমান্ত টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষের বসবাস শাহপরীরদ্বীপের পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর,পূর্বে নাফ নদী, দক্ষিণে সাগর আর নাফনদীর পানি রক্ষার্থে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল অনেকবার। না হয় প্রাকৃতি দুর্যোগে।না হয় জুন, জুলাইয়ের বর্ষাকালে বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়।
আরও পড়ুন : তাইওয়ানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধের হুমকি
এসব ভাঙ্গন দিয়ে সামুদ্রিক জোয়ারে শাহপরীর দ্বীপ পশ্চিমপাড়া মাঝের পাড়া,উত্তরপাড়ার কিছু মসজিদসহ কয়েকশ’ বসত-ভিটা, বাড়ি ঘর সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছিল।এ ভাঙ্গন দিয়ে সাগরের নোনা পানি প্রবেশ করে কৃষি জমিজমা বিলুপ্ত হয়। চারটি গ্রাম অচিরেই হারিয়ে যায় এতে কয়েকশ মানুষ ঘর হারা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।
দীর্ঘ প্রতিক্ষিত বেড়িবাঁধ ও সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ায় এ অঞ্চলের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মাঝে ফিরেছে স্বস্তি। দীর্ঘদিন পরে হলেও টেকসই বাঁধ পেয়েছে চরম আনন্দে সাধারণ মানুষ। কিন্তু ১০০ টি ভূমিহীন পরিবারের দুঃখ প্রকাশ করবে কাকে। নুনা পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে তাদের জায়গা ফিরে পেতে চাই। তা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এ পরিবার গুলো সাগরের তীরে জেগে ওঠা জায়গায় কোনোমতে দুই এক ঘন্টা ঘুমিয়ে আবার জেগে ওঠে নোনা পানির ভয়ে। কবে জোয়ারে পানিতে ডুবে যায় এ ভয় নিয়ে তাদের নির্ঘুম রাত কেটে যায়।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আ’লীগ গড়তে হবে
নোনা জলে ঘর হারানো মানুষরা বলেছেন, বছরে কয়েকবার করে বাড়ি বদলানোর ফলে তাদের জীবনে নেমে আসা অবর্ণনীয় দুর্দশার খবর নিতে কেউ আসে না। মাথা গোঁজার এক টুকরো ঠাঁই নেই বলে, সেই ভাঙনকবলিত নাফনদের ধারেই আশ্রয় নিয়ে, কোনোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
শাহপরীরদ্বীপ জালিয়া পাড়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ ইসলাম (৩৫)জানান, ‘নাফনদ ভাঙার আগ্রাসনে নিঃস্ব হয়ে গেছি। অভাবের কারনে ঘরের কাছে ভাঙন চলে এলেও ঘরটা অন্যত্রে সরানোর সুযোগ নেই। সম্পদশালী লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেও একেবারে নিঃস্ব মানুষগুলো কোথাও যাওয়ার সুযোগ না পেয়ে নাফনদের পাড়ে থাকছি পরিবার পরিজন নিয়ে। তাই ভেঙে পড়া ঘরখানা টিকে রাখতে চারিদিকে রশি টানা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : আইনি প্রক্রিয়া মেনেই বিদেশে যেতে হবে
তিনি জানান, হয়তো আগামী দু’তিন বছরের মধ্যে এ স্থানটিও ভাঙনে নাফনদে কবলে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারন এর আগে নাফনদের অনেক দূরে আগের আমাদের ঘরবাড়ি ছিল। এখানেও বেশি দিন টিকে থাকা সম্ভব হবে না। শেষ সম্বলটুকু নাফনদে হারিয়ে যাবে। তার আগে আমাদের সবাইকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের আশ্রয়কেন্দ্রে ঘরে ঠাঁই ফেলে সবার সুদিন ফিরে আসতো।
শাহপরীর দ্বীপের বিষয় জানতে চাইলে সাবরাং ইউনিয়নের নুর হোসেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দ্বীপের নাফনদের পাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলো পর্যাক্রমে আশ্রয়স্থল হারাচ্ছে। তাদের অন্যত্রে সরানো যায় কিনা সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
আরও পড়ুন : খালেদা জিয়ার হার্টে পরানো হলো রিং
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কায়সার খসরু জানান, ‘দ্বীপের নাফনদের তীরে বসতি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের পরবর্তী গৃহহীনদের তালিকা অর্ন্তরভুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত তাদেরকে ঘর দেওয়া হবে। এবং পাশাপাশি ভাঙান রোধে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানা যায়, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে শাহপরীরদ্বীপ রক্ষা বাঁধের ৭ কিলোমিটার অংশ সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে নির্মিত বেড়ী বাঁধ ২০০৫ সালের প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের তোড়ে বড় ধরণের ভাঙ্গনের ফলে শত শত পরিবার গৃহহারা, ফসল ও চাষাবাদের জমিতে লবন পানি প্রবেশ করতে থাকে।তাছাড়া সাগরের জোয়ারের পানির কারনে লবণ মাঠ, ঘের, ফসলী জমি ও বসত-ভিটায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল।
আরও পড়ুন : ইউক্রেনের তিন লাখ টন শস্য ধ্বংস
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, শাহপরীর দ্বীপ প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রকল্পের আওতায় তিন কিলোমিটার ভাঙনরোধে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসটিএ।
দুই পাশের সিসি ব্লকের সাহায্যে বাঁধের শতভাগ কাজ চলতি বছরের এপ্রিলে শেষ হয়েছে।
আরও পড়ুন : বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ
জানতে চাইলে কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান,জালিয়া পাড়ার নাফনদের পাড়ে দুটি বিদ্যালয়সহ যেসব বসতি রয়েছে তাদের রক্ষায় গত বছর ৪০ লাখ টাকায় রক্ষা বাধঁ দেওয়া হয়েছিল। তবু ভাঙান রোধ কঠিন হয়ে পড়ছে। এরপরও কয়েকদিনের মধ্য আমরা ভাঙান রোধে সেখানে কাজ শুরু করবো।
সান নিউজ/এনইচএন