এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ: কোরবানির ঈদকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো এবারও গরু মোটাতাজা করণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন ঈশ্বরগঞ্জের খামারিরা। ভালো দাম পাওয়ার আশায় গরুর খামারীরা শেষ সময়ে এসে গরুর পরিচর্যা ও বিভিন্ন হাটে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে গরুর দাম বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে। এবার উপজেলায় ৯ হাজার ৭৪৯টি পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ছোট বড়ো মিলিয়ে ৭৬টি খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। খামার মালিক ও কৃষকেরা বাজারের চেয়ে খামার এবং বাড়িতেই গরু ক্রয়-বিক্রয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন সাবধানে চলাচলের নির্দেশ
জানা যায়, মাংসের দাম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে খামারীদের। বাণিজ্যিকভাবে গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলছে। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বিক্রির উদ্দেশ্যে এসব পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে।
এদিকে ঈদুল আজহার কোরবানির হাটে আসা ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং বেশি দামে পশু বিক্রির জন্য মালিক ও ব্যবসায়ীরা যেন নিষিদ্ধ ভারতীয় ঔষধ গরুকে না খাওয়ান সে দাবি সচেতন মহলের। নিষিদ্ধ ঔষধ খেয়ে গরু নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আক্রান্ত গরুর মাংস খেলে মানুষও নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রশাসনকে ওষুধের দোকানগুলোতে এসব ক্ষতিকর নিষিদ্ধ ওষুধ বিক্রি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে ধান মজুদ, ১ লক্ষ টাকা জরিমানা
উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের নিজতুলন্দর পড়া পাড়া গ্রামে আহেলি এগ্রো ফার্মের দায়িত্বে থাকা মোঃ মতিউর রহমান তালুকদার বলেন, দেশীয় জাতের ছোট বড় মিলিয়ে ৭১টি গরু লালন পালন করা হচ্ছে তার খামারে। এরমধ্যে ৬০টি মাঝারি ও বড় ষাঁড় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে মোটাতাজা করা হচ্ছে। দেশীয় গরুর চাহিদা থাকায় এরই মধ্যে খামার পরিদর্শনে আসছেন ক্রেতারা। অনেকে খামার থেকেই গরু কিনে নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।এদিকে উপজেলার ৩০৪ টি গ্রামই এখন যেন একেকটি গো-খামারে পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের এমন কোন বাড়ি পাওয়া যাবে না যেখানে ঈদে একটি বা দুটি গরু কুরবানি ঈদে বিক্রি করে না। তিনি আরও জানান, আমরা কোন রকম নিষিদ্ধ ঔষধ সেবন ছাড়াই গরু মোটাতাজা করে থাকি।
গরু খামারীরা জানান, এবার গো-খাদ্যের দাম বেশি। যার কারণে গরু লালন করতে এবার খরচ হয়েছে বেশি। সে তুলনায় গরুর দাম ভালো না পেলে খামারীদের মাথায় হাত ওঠবে।অনেক খামারী জানান, গরু মোটাতাজাকরণ খামার করতে যে ধরনের টাকার প্রয়োজন সে ধরনের অর্থ অনেকেরই নেই। টাকার অভাবেই গরুকে খাওয়াতে পারছে না। ফলে ঈদ আসার আগেই অনেকেই গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে গো-খামার করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে ঈশ্বরগঞ্জের বেকার যুবক। এ অভিমত অনেক খামারীর।
আরও পড়ুন: বসুরহাট পৌরসভার বাজেট ঘোষণা
বিগত কয়েক বছর গরু খামার করে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে অনেকেই। বেকার যুবক ও দরিদ্ররা খামার করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অপরদিকে খামারের গোবর থেকে বায়োগ্যাস করে সংসারে জালানীর সাশ্রয় করছে। ফলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বেকার যুবকরা এ বছরও গরু মোটাতাজাকরনে নজর দিয়েছে। গরুর ভালো দাম পেলে আগামীতেও তারা গরুমোটাতাজারণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে বলে অভিমত প্রকাশ করে।
গরুকে নিষিদ্ধ ঔষধ খাওয়ানোর ফলে মানবদেহে এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নূরুল হুদা খান জানান, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে স্টেরয়েডের উপাদান ঢুকে পড়ে। এতে হরমোন, কিডনির সমস্যা,শরীর ব্যাথা, হাড় ক্ষয়,ডায়বেটিসহ মানুষ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি মানুষ মারাও যেতে পারে।
আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ৫০০ কোটি ডলার
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: আবু সাদাত মোঃ সায়েম বলেন, উপজেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি ও পশুপালনে নিয়োজিত রয়েছেন। প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে আগ্রহী ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হয়েছে। এ কারণে এবার উপজেলায় কুরবানির চাহিদার থেকে বেশি পশু প্রস্তুত হয়েছে। ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ রাখতে পারলে কৃষক ও খামারিরা ন্যায্য মূল্যে কুরবানি পশু সরবরাহ করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, পশুকে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। যদি কোন খামারি ও ঔষধ বিক্রেতা এর সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাদের তথ্য - প্রমাণ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সান নিউজ/এফএ