শরীয়তপুর প্রতিনিধি: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে স্বামী ও সৎ ছেলের হাতে নুরজাহান বেগম (৫০) নামক এক গৃহবধু খুন হয়েছে। রবিবার (৫ জুন) রাতে সখিপুর থানার সখিপুর ইউনিয়নের নইমউদ্দিন সরদার কান্দি ২ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নুরজাহান বেগম সখিপুর ইউনিয়নের নইমউদ্দিন সরদার কান্দি গ্রামের ফজলুর বেপারীর প্রথম স্ত্রী। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। এঘটনায় নিহতের ছেলে মামুন বেপারী সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকেই আসামিরা পলাতক।
স্থানীয় ও পরিবারিকসূত্রে জানা গেছে, ফজলুর বেপারী দীর্ঘদিন প্রথম স্ত্রীকে রেখে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে কাচিকাটা ইউনিয়নে বসবাস করছে। কয়েকদিন আগে কাচিকাটার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সখিপুরে চলে আসেন ফজলুর। এরপর থেকেই পারিবারিক কলহ শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রবিবার ফজলুর বেপারী ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী মোরশেদা বেগম এবং তার ছেলে সাগর বেপারী ও বিল্লাল বেপারী সখিপুরে পরিকল্পিতভাবে দেশী অস্ত্র নিয়ে আসে। এরপর রাতে ফজলুর তার প্রথম স্ত্রী নুরজাহানকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। সে ঘর বের না হওয়ায় ফজলুর, দ্বিতীয় স্ত্রী মোরশেদা বেগম এবং তার দুই ছেলে সাগর ও বিল্লাল এলোপাথাড়ি কোপায় ও পায়ের রগ কেটে ফেলে নুরজাহানের। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এস বাঁধা দিলে মিন্টু নামে একজনকে কোপায় বিল্লাল।
পরে নুরজাহানের ছেলে মামুন এবং মেয়ে জেসমীন ও জামাতাকেও কুপিয়ে জখম করে। পরে প্রতিবেশীরা তাদের উদ্ধার ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। অবস্থার অবনতি হলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকায় প্রেরণ করে। ঢাকায় যাওয়ার পথে মারা যায় নুরজাহান। এঘটনায় নিহতের ছেলে মামুন বেপারী বাদী হয়ে সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক।
এ ব্যাপারে নিহতের মেয়ে জেসমিন আক্তার বলেন, আমার মাকে আমার বাবা, সৎ মা ও সৎ ভাই সাগর ও বিল্লাল বেপারী সব সময় মারধর করত। আমি ঢাকায় গাজিপুরে চাকুরী করি। আমার মা আমাকে বলে, “ জেসমিন আমাকে প্রতিনিয়ত তোর বাবা, সৎ মা ও সৎ ভাই মারধর করে, তুই আমাকে তোর কাছে নিয়ে যা।” পরে আমি রবিবার সন্ধায় গ্রামের বাড়ি সখিপুরে আসি। রাত ৯ টার সময় আমি আমার চাচাদের বাসায় টিভি দেখছিলাম। পরে আমার মায়ের চিৎকারের আওয়াজ শুনে ঘরে এসে দেখি আমার মাকে কুপিয়ে মেরে ফেলতেছে তারা। আমি ও আমার স্বামী ছাড়াতে গেলে আমার স্বামীকেও কোপায়। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। আমি আমার বাবা ও ওই নির্মম পশুদের ফাঁসি চাই
এ ব্যাপারে সখিপুর থানার ওসি (তদন্ত) ওবায়দুল হক বলেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে স্বামী তার দ্বিতীয় স্ত্রী ও সৎ ছেলেরা মিলে প্রথম স্ত্রীকে কুপিয়ে আহত করার পরে ঢাকা হাসপাতালে নেওয়ার সময় প্রথম স্ত্রী মারা যায়। লাশ ময়না তদন্তের জন্য শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলে মামুন বেপারী সখিপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর থেকে আসামীরা পলাতক। আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সান নিউজ/এনকে