নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি কমছে বেশ দ্রুত। পদ্মায় অবশ্য ধীরগতি। মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীতেও হ্রাস পাচ্ছে পানি। তবে বন্যার পরিস্থিতি উন্নত হলেও দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
পানিবন্দিসহ বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ার কথা জানিয়েছে। এতে তাদের দিন কাটছে কষ্টে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর ও টাঙ্গাইল জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সোমবার (০৬ জুলাই) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দেওয়া পূর্বাভাস অনুযায়ী, স্থিতিশীল থাকতে পারে শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি। পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় শেরপুরের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও কর্তৃপক্ষের বরাতে এবং সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধি ও প্রতিবেদকদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :
কুড়িগ্রাম : জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নামলেও এখনো ধরলার পানি বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটারের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তা ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অনেকেই এখনো ঘরে ফিরতে পারেনি। দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকট ও স্যানিটেশন সমস্যা। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
জেলায় এই পর্যন্ত পাঁচটি স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে। উলিপুরের সাহেবের আলগা, বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই হাজার পরিবার ভিটামাটি হারিয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নে ভাঙন ঠেকাতে চার হাজার জিও ব্যাগ পাঠানো হয়েছে। সাহেবের আলগা ও কর্তিমারীতে ভাঙন ঠেকাতে শিগগিরই কাজ শুরু হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি পোষাতে কৃষক পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা স্থাপন করা হবে। এ জন্য কৃষকের মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার ৯৩৫ টাকা করে দেওয়া হবে।
গাইবান্ধা : ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও তিস্তা নদীর পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখ ঘাটে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপত্সীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে করতোয়ার পানি বাড়ায় গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ী উপজেলায় অনেক নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। গেলো রোববার (৫ জুলাই) বিকেল ৩টা থেকে গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত করতোয়ায় পানি বেড়েছে ৬২ সেন্টিমিটার। তবে এখনো তা বিপত্সীমার নিচে রয়েছে।
পানিবন্দি এবং বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পায়নি বলে জানিয়েছে এবং পাওয়ার কথাও বলেছে।
শেরপুর : পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরাতন ভাঙন অংশ দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় সদর উপজেলার কামারেরচর ও চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।
রাজবাড়ী : রবিবারের পর গতকালও কমেছে গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি। গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়ায় ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপত্সীমার ৩৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল গতকাল। এ ছাড়া সদর উপজেলার মহেন্দ্রপুর ও পাংশার সেনগ্রাম গেজ স্টেশন পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপত্সীমার নিচে রয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ : গত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীনগরের ভাগ্যকূলে পদ্মার পানি ১২ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে। এর পরও গতকাল বিপত্সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে পদ্মা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলের জনপদগুলোতে পানি কমতে শুরু করেছে। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মার পানি হ্রাস পেয়েছে ছয় সেন্টিমিটার।
জেলার চারটি উপজেলার নদীতীরবর্তী গ্রামগুলোতে মানুষ এখনো পানিবন্দি। লৌহজংয়ের দক্ষিণ মেদেনীমণ্ডল ও মামুদপট্টি গ্রামে বানের পানি ঢুকে পড়ায় পাঁচ শতাধিক পরিবার, লৌহজংয়ের সন্দিসা, খিদিরপাড়া, গাঁওদিয়া, বেজগাঁও, পয়সা, মাইজগাঁওসহ পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকার শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
সান নিউজ/ আরএইচ