শফিক স্বপন,মাদারীপুর : পরিশ্রম আর দীর্ঘ কয়েক মাসের অপেক্ষার পর চলছে পাকা ধান কাটার কার্যক্রম। মাঠে মাঠে এখন কৃষাণ-কৃষাণীদের এখন দারুন ব্যস্ততা। চলছে ধান কাটা, মাড়াই ও সংরক্ষণের কাজ। এরইমধ্যে দক্ষিণিাঞ্চলের অনেক কৃষকের গোলাতেও বোরো ধান উঠতে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন : ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বােধন
গ্রামীণ জনপদের বেশিরভাগ জায়গাতেই সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকা ধান কর্তন, মাড়াই, ঝাড়াই, সিদ্ধ ও গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত খড়-কুটো শুকাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন কৃষক-কৃষাণীরা।
মাদারীপুর জেলার ৪টি উপজেলায় চলতি মওসুমে ৩৩ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হলে অর্জিত হয়েছে ৩৩ হাজার ৪শ ৮৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান। এর মধ্যে মাদারীপুর সদর উপজেলায় ৯ হাজার ৮শ ৩০ হেক্টর, কালকিনি উপজেলায় ১০ হাজার ৫শ ২০ হেক্টর, রাজৈর উপজেলায় ১০ হাজার ১শ ২০ হেক্টর ও শিবচর উপজেলায় ৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপাদন হয়েছে। এখন মাদারীপুর জেলার সর্বত্র বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ চলছে। ধান কেটে আঁটি বেঁধে রেখেছেন ক্ষেতের মাঝেই। পড়ন্ত বিকালে সেই আঁটি মাথায় কিংবা গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছেন কৃষকরা। বাড়িতে চলছে ধান মাড়াইয়ের কাজ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে ব্যস্ত রয়েছে। তবে ভালো দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
আরও পড়ুন : ঢাবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সংঘর্ষ
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জমিতে পোকার আক্রমণ কম হলেও ধানের আশানুরূপ ফলন হচ্ছে না। অসময়ে বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে গাছ হেলে পড়ে যাওয়ায় ধানের ফলন কম হচ্ছে। গত বারের তুলনায় এবার ধানের ফলন কম কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি হয়েছে। অন্যদিকে শ্রমিক সংকট থাকায় ধান কাটা ব্যাহত হচ্ছে।
শিবচর উপজেলার চরজানাজাত এলাকার কৃষক খবির বয়াতী বলেন, ‘আমি এবার ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। প্রথম দিকে ঘন কুয়াশায় বীজতলার কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে সে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো ফলন হয়েছে।’
আরও পড়ুন : রাশিয়ার সঙ্গে বন্দিবিনিময়ের জন্য প্রস্তুত
সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সাবেক গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আঃ রাজ্জাক জানান, আমি এবার ৫/৬ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। ফলন বেশ ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৮ মণ করে ধান পেয়েছি। ফলন ভালো হলেও ধান-কাটা মাড়াইয়ে বিঘাপ্রতি ৪/৫ হাজার টাকা শ্রমিকমূল্য দেওয়ার কারনে তিনি বিপাকে পড়েছেন বলে জানান।
স্থানীয় গৃহবধূ আয়শা বেগম বলেন, আমরা এখন বোরোধান কাটা-মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছি। কৃষক স্বামীর সাথে বোরোধান কাটা-মাড়াইয়ে আমি সহযোগিতা করছি। মাড়াইকৃত ধান ও ধানের ঘর শুকাতে আমাদের সময় চলে যাচ্ছে।
রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট লুন্দি এলাকার কৃষি শ্রমিক সুজন বর্মন,খালেক, রহিম খালাসি জানান, এবার বোরো ধান কাটানোর শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে। এর সাথে শ্রমিকের মূল্য বেড়েছে। কারন- বোরোধান কাটা-মাড়াই সব স্থানে লেগেছে।
আরও পড়ুন : হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন
দিনমজুররা আরও জানান, আগে আমরা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় প্রতিদিন দিনমজুর দিতাম। এবার বোরো ধান কাটা মৌসূমে একজন দিনমজুরের দৈনিক কাজের হাজিরা হিসেবে পাচ্ছি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এতে তরিতরকারি ও মাছ মাংস খেতে পাচ্ছি আমরা।
মাদারীপুরের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হেমায়েত হোসেন জানান, ইতোমধ্যে বোরোধান কাটা মাড়াই পরোদমে শুরু হয়েছে। জেলায় গত বছর কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্যে পাওয়ায় এবছর অনাবাদি বহু জমি বোরো চাষের আওতায় এসেছে।
ফলে জেলায় বোরো ধানের কাঙ্খিত লক্ষামাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চালের দাম একটু বেশি থাকায় কৃষকরা এক, দু মাস পরে বিক্রি করলে দাম আরো ভালো পাবে বলে আশা করছি।
সান নিউজ/এইচএন