সান নিউজ ডেস্ক: সিলেটে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে পানি কমলেও জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। নগরীর বেশিরভাগ বাসা বাড়ি থেকে এখনো পানি নামেনি। সুরমা, কুশিয়ারা, ধলাই, পিয়াইন নদ-নদীর পানি আগের থেকে অনেকটাই কমে গেছে।
আরও পড়ুন: গলা কেটে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা
অন্যদিকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দুর্ভোগ বাড়ছে বানভাসিদের। নানা রোগ বালাই দেখা দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে। বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে ত্রাণের জন্য চলছে হাহাকার।
রোববার (২২ মে) সকাল থেকে সিলেটে রোধের দেখা মিলেছে। বৃষ্টির কোন আভাস নেই।
পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে চলতি মাসের ১১ মে থেকে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ধীরে ধীরে বন্যা বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট মহানগরেরও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। এক এক করে মহানগরীর প্রায় ২০ টি ওয়ার্ড বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় অনেক মানুষই বিভিন্ন অশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে অবস্থান করেন।
আরও পড়ুন: ‘মাঙ্কিপক্স’ নিয়ে বন্দরে সতর্কতা
জানা গেছে, বন্যায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, ঘাসিটুলা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, তালতলা, কুয়ারপার, মেন্দিবাগ, কামালগড়, চালিবন্দর, যতরপুর, সোবহানিঘাট, কালীঘাট, শেখঘাট, তালতলা, জামতলা, মাছুদীঘিরপার, রামের দিঘীরপার, মোগলটুলা, খুলিয়া টুলা, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোড, ভার্থখলা, মোমিনখলা, পিরোজপুর, আলমপুর ও ঝালোপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ওঠে। এসব এলাকার অনেক বাসা-বাড়িতে কোমর সমান পানি ছিল।
সরেজমিনে এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যেসব বাসা বাড়ি বা দোকানপাটে পানি প্রবেশ করেছিল, তা ধোয়ামোছা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে এসব বাড়ি-ঘর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অনেক বেগ পোহাতে হবে বাসিন্দাদের।
অপরদিকে বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস লাইন পানির নিচে থাকায় সেগুলি লিকেজ হয়েছে। সেখানে পানি বুধবুধ করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জালালাবাদ গ্যাস অফিস বলছে, পানি পুরোপুরিভাবে নেমে না যাওয়া পর্যন্ত গ্যাস লাইন মেরামতেরর কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: বাইডেনের ওপর রাশিয়ার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
অপরদিকে সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কান্দিগাও, মোগলগাও, খাদিমনগর, হাটখোলা ও জালালাবাদ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে রয়েছে ৯০ ভাগ মানুষ। ফলে চরম মানবেতর দিন পার করতে হচ্ছে বানভাসিদের।
সিলেটে বন্যা কবলিত এলাকা কানাইঘাট জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। শনিবার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ত্রাণ বিতরণ করে ফেরার পর বন্যার্তদেও মধ্যে ত্রাণ নিয়ে কাড়াড়ির ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, দিন দিন আবহাওয়ার উন্নতি হচ্ছে। তিন-চার দিন আগেও যেখানে কয়েক শ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল মাত্র ১২ মিলিলিটার। সোমবার (২৩ মে) থেকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: যমুনার পানি বিপৎসীমায়
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, শনিবার দিনভর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি দুর্গত এলাকার মানুষদের তালিকা তৈরি করেন। তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি কাজ করছেন বলে জানান।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এস এম শহিদুল ইসলাম বলেন, যদিও প্রধান নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার উপরে থাকলেও বস্যার পানি কমতে শুরু করেছে। সামনের দিনগুলোতে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি বাড়ার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় পানি নেমে যেতে আরও চার-পাঁচ দিন লাগতে পারে। বন্যায় যেসব বাঁধ ভেঙে গেছে সেসব স্থানে আমাদের পক্ষ থেকে আবার নতুন করে বাঁধ দেওয়া হচ্ছে।
সান নিউজ/এনকে