এহসানুল হক, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ): ‘দিনের লীলা (রূপ) আর ভাল্লাগে না। খাবলাইয়া- খুবলাইয়া (তড়িঘড়ি করে) ধানডি কোন মতে লইছি। কিন্তু বনডি (খড়গুলো) আর লইতে পারছি না। ক্ষেতে ও রাস্তার ধারে (পাশে) রাখা বনগুলো বৃষ্টিতে ভিজে পচে গেছে। দুইদিন যাবৎ নিবিনিবি রইদ (রোদ) উঠলে, আবার দিন অন্ধকার করে। একবার বন দলা করি (স্তুপ করে রাখি), আরেকবার লারি (রোদে শুকাতে দেই)।’ এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়নের নিচতুলন্দর গ্রামের কৃষাণী রওশন আরা।
আরও পড়ুন: এদিন বাংলার মাটিতে ফিরেন শেখ হাসিনা
এদিকে, পার্শ্ববর্তী ঘাগড়া পাড়া গ্রামের আরেক কৃষাণী শামসুন্নাহার বেগম জানান, বৃষ্টিতে ভিজে বন (খড়) পচে গেছে। পচা বন হুহাইলেও (শুকালেও) গরু খাইতো চায় না।
সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়, বিগত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাতের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। এতে বেশির ভাগ ধান রক্ষা করতে পারলেও প্রতিকূল আবহাওয়া এবং বৃষ্টিতে ধানের খড় সংরক্ষণ করতে পারছেন না তারা। তাই মাঠের মধ্যেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড়। এ কারণে দিয়েছে গো-খাদ্য সংকট। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন খামারিরা।
কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় আগে নিজেরা খেয়ে বেঁচে থাকার কথা চিন্তা করে ধানের প্রতি খেয়াল তাদের। তাই খড়ের দিকে নজর দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না।এছাড়া খড় শুকানোর প্রখর রোদ না থাকায় খড় সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বলছে, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ১৭৫টি গাভীর খামার ও গরু মোটাতাজা খামার ১০৫টিসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় তিন শতাধিক গরুর খামার রয়েছে। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক কৃষকই বাড়িতে গরু পালন করেন। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমি খামারিসহ ব্যবসায়ীরা গরু পালন করেন।
আরও পড়ুন: কান চলচ্চিত্র উৎসবে অনন্ত-বর্ষা
সরেজমিনে গত কয়েকদিনে উপজেলার ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়ন, মাইজবাগ, উচাখিলা, জাটিয়া, আঠারবাড়ি, তারুন্দিয়াসহ বেশ কয়কটি এলাকা ঘুরে ক্ষেতের পানি ও বৃষ্টিতে খড় নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।
জাটিয়া ইউনিয়নের কৃষকপুত্র সোহেল মিয়া জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতেই ব্যস্ত। তাই খড়ের প্রতি তাদের নজর নেই।
তিনি আরও জানান, কৃষকরা ধান ক্ষেতেই খড় শুকাতো। কিন্তু ক্ষেতে পানি থাকায় সেখানে খড় শুকানোর মতো পরিস্থিতি নেই। এছাড়া খড় শুকাতে প্রখর রোদের প্রয়োজন। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই খড়গুলো রোদে শুকোতে দিলে এক-দুইদিনের মধ্যে শুকিয়ে যেত। পরে সেগুলো গো-খাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হতো। যাদের গরু আছে তারা সেগুলো নিজেদের গরুকে খাওয়াতেন আর যাদের গরু নেই, তারা সেগুলো বিক্রি করতে পারতেন।এছাড়া কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটার কারণে খড়গুলো জমির কাদা পানিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ব জুড়ে আরও ১১১৭ জনের মৃত্যু
এদিকে সচেতন মহলের লোকেরা মনে করছেন, এবারে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় ক্ষেতেই খড় ফেলে রাখা হয়েছে। খড় সংকটের প্রভাব সামনে কোরবানির ঈদেও পড়বে বলে মন্তব্য করেন তারা।
কৃষক ও গরু পানলকারী শফিকুল ইসলাম বলেন, খড় ভিজলে বা পানিতে থাকার পরে সেই খড় শুকিয়ে নিলে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এ জন্য সেগুলো খেতে দিলে গরু খায় না।
আরও পড়ুন: ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়’
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু সাদাত মোঃ সায়েম বলেন, ভিজা বা আধপচা খড় গরু খেতে না চাইলে খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। খড় ও গো-খাদ্যের সংকট নিরসনে ঘাস চাষের কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে খামারিদের খড় সংরক্ষণের জন্য উপদেশ দেওয়া হয়। কিভাবে খড় সংরক্ষণ করতে হবে, সে প্রশিক্ষণও আমরা দিয়ে থাকি।
সান নিউজ/এমকেএইচ